হুগলি জেলায় নাবালিকাদের নিখোঁজ এবং বাল্যবিবাহের ঘটনা ক্রমশ উদ্বেগজনক আকার ধারণ করছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের (NCW) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে শুধুমাত্র হুগলি জেলা থেকেই নিখোঁজ হয়েছে ৮০০-এর বেশি নাবালিকা! মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেই এই প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছে কমিশন।
সোমবার চুঁচুড়ার সার্কিট হাউসে হুগলি জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা অর্চনা মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন হুগলির অতিরিক্ত জেলা শাসক (ডেভেলপমেন্ট), গ্রামীণ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সরকার সহ প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলা কমিশনের তরফে জানানো হয়, হুগলির গ্রামীণ অঞ্চলেই নাবালিকা নিখোঁজের ঘটনা বেশি।
মোবাইলে আসক্তি থেকে নিখোঁজ!
কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের জেরেই নাবালিকাদের নিখোঁজ হওয়ার হার বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিতদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, ব্ল্যাকমেলিং বা প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে মেয়েরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পাচার চক্রের হাতেও তারা ধরা পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাল্যবিবাহের আতঙ্ক
শুধু নিখোঁজের ঘটনাই নয়, হুগলিতে বাল্যবিবাহের প্রবণতাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষত আরামবাগ মহকুমায় স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার ঘটনা লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। মহিলা কমিশন জানিয়েছে, নাবালিকা উদ্ধার হলেও অভিভাবকরা সহজে শাস্তি পান না। এবার থেকে অভিভাবকদেরও আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রয়োজনে জেলেও পাঠানো হতে পারে বলে কমিশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
মহিলা কমিশনের সুপারিশ, পুলিশকে আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, জেলা প্রশাসনকে সচেতনতা শিবির আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলে বিশেষ পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারের সচেতনতা শেখানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। হুগলির গ্রামীণ সমাজে নাবালিকাদের এই ভয়াবহ নিখোঁজ এবং বাল্যবিবাহের প্রবণতা রোধে প্রশাসন কি যথাযথ পদক্ষেপ নেবে? নাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার নেবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।