মুর্শিদাবাদে নতুন ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে শুক্রবার বিক্ষোভে হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাস পরিবার। চন্দন দাস (৪০) ও তার ৭০ বছর বয়সী শ্বশুর হরগোবিন্দ দাসকে ঘরের ভেতর নৃশংসভাবে হত্যা করে জনতা; লাশগুলো তিন ঘণ্টা ঘরের বাইরে পড়ে থাকতে দেয় পুলিশ।
পিঙ্কি দাস, চন্দনের স্ত্রী, শোকে কাঁপতে কাঁপতে জানালেন, “আক্রমণ শুরু হতেই আমরা কল্যাণপুর থানা ফোন করে সাহায্য চাইলাম, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। আমার স্বামী-শ্বশুরের মৃতদেহ তিন ঘণ্টা ধরে ময়লা জমে পড়েছিল বাড়ির পাশে।” দাঙ্গাকারীরা বারবার বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে ককটেল বোমা এবং পাথর ছোড়ে।
আরেক ভুক্তভোগী সেলিমা বিবি তার স্বামী এজাজ আহমেদ (২১)–কে পুলিশের গুলিতে হারিয়েছেন। এজাজ নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে পালিয়ে এসে পুলিশি গুলিতে প্রাণ হারান। তার কাকা শহীদ শেখ বলেন, “মামলার পর কেউ—নেতা বা পুলিশ—আমাদের ঘরে আসেনি। আমাদের কষ্ট বুঝতে কেউ চাইল না।”
স্থানীয়রা জানায়, ঢুলিয়ান, গাজীপুর ও পরলালপুরসহ নানা এলাকায় একইভাবে বাড়িঘর পুড়িয়ে, দোকান লুট ও যানবাহনে আগুন লাগিয়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কৃষক, রাজমিস্ত্রি, শিক্ষক—বিভিন্ন পেশার মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। “নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে মালদায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি, খাবার নেই, ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে,” বলে ছুটে আসা এক শরণার্থী দাবি করেন।
পুলিশি ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতারা—তৃণমূলের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম ও বিজেপি ব্লক আহ্বায়ক উত্তম কুমার দাস—একযোগে নিন্দা জানিয়ে পরিবারগুলিকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। “এ ধরনের বর্বরতা মানবতা শাসন করে,” মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
রাজ্য সরকারের অনুরোধে হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। শুক্রবার রাত থেকেই জঙ্গিপুর, নবদ্বীপনগর ও সামগ্রামপুরে বিএসএফ টহল শুরু করেছে। দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি কর্নি সিং শেখাওয়াত জানিয়েছেন, “আমরা রাজ্য পুলিশের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজন হলে আরও কোম্পানি পাঠানো হবে।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব ভিডিও কনফারেন্সে রাজ্যপাল ও ডিজিকে পরামর্শ দিয়েছেন, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জন্য জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুত চালাতে। তবে দাস পরিবারের মতো অসহায় লোকজন এখনো ন্যায্য সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করছে।