স্বাদ ও গন্ধের জন্য নবাবি তালুক মুর্শিবাদের আমের সুখ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও রয়েছে। মুর্শিদাবাদের নবাবদের ইতিহাস থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এনে তাঁরা নিজেদের বাগানে লাগাতেন। নবাবদের বাগানে ২০০ টিরও বেশি প্রজাতির আম গাছ ছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অনেক আমবাগান কেটে বসতি গড়ে উঠেছে। কিছু কিছু আম বাগানের অস্তিত্ব থাকলেও হরেক প্রজাতির দেখা পাওয়া যায় না। ফলে নবাবি আমলের অনেক প্রজাতির আম ক্রমে জেলার মাটি থেকে হারিয়ে গেছে। আবার অনেক প্রজাতির আম অস্তিত্ব সঙ্কটে। নবাবি আমলের মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রজাতির আমের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করে চলেছেন জিয়াগঞ্জের আম চাষি তথা গবেষক কুশল ঘোষ। গ্রাফটিং-এর সাহায্যে একই গাছে দেড়শোর বেশি প্রজাতির আম ফলন করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী আমগুলিকে কেবল ধরে রাখাই নয় বিজ্ঞানভিত্তিক সঙ্করায়ন পদ্ধতির সাহায্যে নতুন প্রজাতির আম বেলচম্পা, ল্যাম্বো, শ্যামভোগ উৎপন্ন করছেন কুশল ঘোষ। তাঁর তৈরি মিশ্র প্রজাতির আমগুলি স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। কুশলবাবুর এই সৃষ্টির কাজের সর্বক্ষণের সঙ্গী প্রতাপ সিংহ। কুশল ঘোষ জানান, "নতুন কিছু করার ইচ্ছা সবসময় ছিল। ২০০০ সালে এক উদ্যান পালন আধিকারিকের থেকে গ্রাফটিং-এর মাধ্যমে এক গাছে বিভিন্ন প্রজাতির আম ফলানোর হাতেকলমে শিক্ষা লাভ করি। তারপরে জেলা, রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন প্রজাতির আমের শাখা সংগ্রহ করে নিজের বাগানের আমগাছে গ্রাফটিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০২ সাল থেকে একই গাছে বিভিন্ন প্রজাতির কলম বসানোর কাজ শুরু করি। দুই বছর পরে থেকে ফল পাওয়া শুরু হয়। এরপরেই উৎসাহ আরও বাড়তে থাকে। সময়ের সঙ্গে একই গাছে প্রজাতির সংখ্যা বেড়েছে।"
কুশলবাবুর বাগানের একটি গাছে কোহিতুর, বোম্বাই, হিমসাগর, ল্যাংড়া, সারেঙ্গা, বিমলি, বিরা, রানিপসন্দ, আনারস, আলফানসো, ফজলি, গোলাপখাস প্রভৃতি সর্বাধিক ১৬৫ প্রজাতির আম ফলার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এখন প্রজাতির সংখ্যা কমেছে। গত বছর একটি গাছে একশোর বেশি প্রজাতির আম হলেও চলতি বছরে সংখ্যাটা অনেকটাই কমেছে। একটি গাছে ৫০ টি প্রজাতির আম হয়েছে। তবে সঙ্করায়নের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির আম এবারও বঙ্গবাসীকে উপহার দিয়েছেন এই আম গবেষক। মোলামজাম ও রানিপসন্দ প্রজাতির সঙ্করায়ন ঘটিয়ে বেলচম্পা, সারেঙ্গা ও মোলামজামের সঙ্করায়ন ঘটিয়ে শ্যামভোগ, ল্যাংড়া ও বোম্বাই মিলিয়ে ল্যাম্বো এমনি পাঁচ-ছয়টি নতুন প্রজাতির আম তৈরি করেছেন তিনি।