সূত্রের খবর, বেঙ্গল পুলিশের তদন্তকারীরা বেশ কিছু তথ্য হাতে পেয়েছেন। তাতে মুর্শিদাবাদের হিংসায় SDPI-এর জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলছে। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে যে, SDPI-এর সদস্যরা গত বেশ কয়েকদিন ধরে ওয়াকফের নামে এলাকার মুসলিম যুবকদের উস্কানি দিচ্ছিল। SDPI-এর সদস্যরা প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে যুবক ও কিশোরদের ওয়াকফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বলছিলেন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবক ও কিশোরদের বলা হয় যে, সরকার ওয়াকফের নামে মুসলমানদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নেবে। ফলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করতে হবে। এমন বেশ কিছু উস্কানিমূলক কথা বলা হয় বলে দাবি করা হচ্ছে।
মৃত যুবকের পরিবারও এটাই বলছে
শনিবার মুর্শিদাবাদের এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় ইজাজ আহমেদের। বিক্ষোভ চলাকালীন তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর মৃত্যুর পর, ইজাজের পরিবারের সদস্যরাও বলছেন, মুর্শিদাবাদে SDPI উস্কানিমূলক প্রচার চালাচ্ছে।
SIMI- ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দোসর
পুলিশের মতে, এক সময় বাংলায় সিমির কার্যকলাপ এই মুর্শিদাবাদেই সবচেয়ে বেশি ছিল। SIMI-র ফুল ফর্ম 'Students' Islamic Movement of India'। জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন-এর সঙ্গে এটি যুক্ত। তবে পরে, সিমি-র লোকেরা PFI-তে(Popular Front of India, কট্টরপন্থী সংগঠন) যোগ দেয়। মুর্শিদাবাদ পিএফআই-এর ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (UAPA)-এর অধীনে পাঁচ বছরের জন্য এই
PFI-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
আগে থেকেই প্ল্যানিং?
সূত্রের খবর, এই সিমি এবং পিএফআই-এর এই লোকেরাও SDPI-এর সঙ্গে জড়িত। মুর্শিদাবাদে SDPI-এর লোকবল এখনও বেশ শক্তিশালী। পুলিশের মতে, স্থানীয় লোক ছাড়াও, বাইরের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই হিংসায় অংশ নিয়েছিল। ফলে
হিংসার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিতও হতে পারে। কেন?
তার জন্য পর পর টাইমলাইন দেখতে হবে। গত শুক্রবার সবার প্রথমে মুর্শিদাবাদের সুতিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। সেখান থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু। এর ঠিক পরপরই, বিপুল সংখ্যায় বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামে। আন্দোলনের নামে সামশেরগঞ্জে হিংসা ও অগ্নিসংযোগের শুরু হয়। চলে লুটপাট।
এই সামশেরগঞ্জ থেকে সুতির দূরত্ব মাত্র দশ কিলোমিটার। সুতিতেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটকাতে ব্য়স্ত ছিল। জঙ্গিপুর থেকে পুলিশের যে বিরাট ফোর্স এসেছিল, তারা সেই সুতিতেই আটকে যায়। আর সেই সুযোগে সামশেরগঞ্জে চলতে থাকে লুঠতরাজ, ভাঙচুর, হিংসা। ফলে সুতিতে শুরুর কিছুটা পরেই সামশেরগঞ্জে বিক্ষোভ-ভাঙচুর কাকতালীয় না-ও হতে পারে।
সুতি ও সামশেরগঞ্জ, দুই স্থানেই সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিন্দুদের দোকান ও বাড়ি বেছে বেছে টার্গেট করা হয়।
তদন্তে দেখা যাচ্ছে, হিংসার ঘটনায় অল্পবয়সী যুবক এবং নাবালকদের একটি বড় অংশ ছিল। দশ থেকে কুড়ি বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন ভিডিও খতিয়ে দেখলেই সেটা স্পষ্ট।
প্রাথমিক তদন্তে আরও জানা গিয়েছে যে, উন্মত্ত হামলাকারীদের বেশিরভাগই ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। ইদের ছুটি কাটাতে মুর্শিদাবাদের বাড়িতে এসেছে।