হাতুড়ে দিয়ে করোনা মোকাবিলার পরিকল্পনা
প্রত্যন্ত এলাকা, যেখানে স্বাস্থ্য কেন্দ্র দূরের কথা, কোনও চিকিৎসা পরিষেবা নেই, সেখানে এই হাতুড়েরাই ভরসা। অনেকে ছোট বাড়িতে চিকিৎসকদের মতন চেম্বার চালু করেছেন, কেউ বা সাইকেলে বাইকে ভ্রাম্যমান। এই পেশার মানুষদের সংগঠিত করে তাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষন দিয়ে কোভিড মোকাবিলায় নামালো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লিভার ফাউন্ডেশন।
হাতুড়েরাই ভরসা গ্রামে
মফ:স্বল শহর বা গ্রামের মানুষ এখনও যে কোনও শারীরিক সমস্যায় এলাকার হাতুড়ে বা কোয়াক পেশাজীবীদের উপর ভরসা করেন। এরা কোথাও শিখে এসে ইনজেকশন দেওয়া, ব্যান্ডেজ করা, গ্যাস, অম্বল, জ্বর, পেট ব্যথা, এসব চলতি অসুখের ওষুধ দিয়ে থাকেন।
সিউড়িতে প্রথম দফার প্রশিক্ষণ
বীরভূমের সিউড়ি শহর সংলগ্ন নগরী গ্রামে, শরদীশ রায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক দফা প্রশিক্ষন হয়েছে।সেখানে কোয়াকদের বোঝানো হয়েছে, কি করবেন, আর কি করবেন না। ডাঃ শৈবাল মজুমদার বলেন ওনাদের মনে রাখতে বলছি যে চিকিৎসা পরিষেবা দিলেও তারা পড়াশুনো করে প্রথা মাফিক প্রশিক্ষন নেওয়া চিকিৎসক নন। অথচ এটাও সত্য যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই কোয়াকদের পরিষেবাতেই বহু মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছেন।
কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে হাতুড়েদের
এদের বোঝানো হচ্ছে, এলাকায় জ্বর হয়েছে খবর পেলেই আগে রুগীকে কোভিড পরীক্ষার জন্য সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, সেখানে পজিটিভ হলে তাকে হোম আইসোলেশনে রাখা, সেখানে নিয়মিত তাকে পর্যবেক্ষণ বলতে তাপমাত্রা পরীক্ষা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা দেখা এবং অক্সিজেন মাত্রা পরীক্ষা করা এগুলোই শেখানো হয়েছে। আইসোলেশনে ১৪ দিন রাখার পর রোগী নেগেটিভ হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া এবং পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করছে, এমন লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসককে জানানো তারপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা। এটাই কোয়াকদের কাজ। যে সব টিম গুলো কাজ করবে তাদের মাথায় থাকবে একজন করে চিকিৎসক, সমস্ত কোয়াক যারা যুক্ত হচ্ছেন তাদের নাম, ঠিকানা লিপিবদ্ধ থাকবে ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
সরকারি ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই শুশ্রুষায় জোর
সরকারি ব্যবস্থার মধ্যে রুগীদের শুরুতেই সহায়তা করে সুস্থ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। বীরভূমের সাইথিয়া, মুরারই , কীর্ণাহার, সিউড়ি এলাকায় এ কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দিকে ভয়, জড়তা, আতঙ্ক এসব থাকলেও কোয়াকরা কিন্তু এ কাজ শুরু করায় ঐসব এলাকার মানুষ উপকার পাচ্ছেন।
পথে নামছেন ২ হাজার হাতুড়ে
ডা: শৈবাল মজুমদার বলেন দু হাজার কোয়াক প্রশিক্ষন নিয়েছেন। আগামীতে রাজ্য জুড়ে কোয়াকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষন দিয়ে কোভিড যোদ্ধা হিসেবে নামাতে চলেছে রাজ্য সরকার। তিনি উদাহরন দিয়ে বললেন এইমাত্র তার কর্মস্থল সরকারি হাসপাতালে এক কোভিড রুগী এলেন যার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৪০ এ নেমে গিয়েছে। এক সপ্তাহের বেশি জ্বর। অথচ কোভিড পরীক্ষা করা হয়নি। ইতিমধ্যে ফুসফুসের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে । আমরা চাই এরকম পরিস্থিতিতে থাকা মানুষকেও অসুখ সম্বন্ধে সচেতন করতে। লিভার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বীরভূমের মানুষ চিকিৎসক ডা: অভিজিৎ চৌধুরী রাজ্য সরকারের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক। তিনি জানান, কাজ চলছে, কোয়াকদের প্রশিক্ষিত করে তুললে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পরিষেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে হবে সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
হাতুড়েদের রেকর্ড তৈরি কাজ শুরু হয়েছে
ইতিমধ্যে রাজ্য জুড়ে কোয়াক হাতুড়েদের ফোন নম্বর ঠিকানা সংগ্রহ করে স্বাস্হ্য দপ্তরের খাতায় রাখা হচ্ছে।হোয়াটস অ্যাপে পৌছে যাচ্ছে এ সময় সমাজকে বাঁচাতে কি করবেন আর কি করবেন না , বলছেন বিশিষ্ট গবেষক চিকিৎসকেরা। সকলে প্রত্যয়ী এ যুদ্ধেও জিতবেন তারা।