আরজি করকাণ্ডে নাটকীয় মোড়। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সমর্থনে এবার গণ ইস্তফা দিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা। সিনিয়র ডাক্তাররা বলেছেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগীদের সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা চাই সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করুক।'
ধর্মতলায় ১০ দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ৭ জন জুনিয়র ডাক্তার অনশন চালাচ্ছেন। আজ বিকেলে মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। যদিও মিছিলের অনুমতি দেয়নি কলকাতা পুলিশ। এই আবহে এবার জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে গণইস্তফা দিলেন আরজি করের প্রায় ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক।
সম্পূর্ণ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে সরকারকে রীতিমতো ডেডলাইন দেন আন্দোলনকারীরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হলে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি দেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। পাশাপাশি, ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন তাঁরা। ডেডলাইন পার হওয়ায় শনিবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
গত শুক্রবার আরজি করকাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় ধর্মতলায়। জুনিয়র ডাক্তারদের লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তাঁদের চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্য়ায় ধর্মতলায় অবস্থানে বসেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ব্যস্ততম ধর্মতলা। যানজটে দুর্ভোগের শিকার হন নিত্যযাত্রীরা। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান জুনিয়র ডাক্তাররা। 'কলকাতা পুলিশ হায় হায়' স্লোগান দেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ধর্মতলায় অবস্থানে বসেছেন তাঁরা। পুলিশকে ঘিরে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। পরে সেখানে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন তাঁরা। সেইসঙ্গে রাজ্য সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে পরবর্তী কর্মসূচির কথা জানান তাঁরা।
আরজি করকাণ্ডে বিচারের দাবিতে বুধবার কলকাতায় মহামিছিল করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মিছিলে শামিল হয় নাগরিক সমাজ। মহালয়ায় ভোর দখল কর্মসূচিও পালন করা হয়। ফের পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। পুজোর সময় পূর্ণ কর্মবিরতি চালাবেন কি না, সে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে সেই বৈঠক শেষ হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি। এর আগে, ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মবিরতি চালাচ্ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
৫ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসেন তাঁরা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণের দাবিতে লালবাজার অভিযানও করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে দীর্ঘ বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। দীর্ঘ সেই বৈঠকের পর জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মতো কলকাতার পুলিশ কমিশনার, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে সরানো হয়েছে। তবে আরও কিছু দাবি রয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের। সেই দাবি পূরণ করতে আলোচনায় বসার জন্য রাজ্যকে ফের ইমেল পাঠান তাঁরা। এরপরে নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জুনিয়র ডাক্তাররা। দীর্ঘ সেই বৈঠকে মিনিটসে সই করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয় বলে অভিযোগ। জুনিয়র ডাক্তারদের বাকি দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি। পরে তাঁরা আংশিক কর্মবিরতি চালান। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান তুলেছেন। তবে গত সপ্তাহ থেকে ফের পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফিরেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। পুজোর আগে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে অবস্থানে শামিল হয়েছেন তাঁরা।