পুরুলিয়ার গভীর জঙ্গলে বাঘিনী জিনাতকে ধরার জন্য বন দফতর প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত বাঘিনীর অবস্থান চিহ্নিত করা গেলেও তাকে খাঁচাবন্দি করা সম্ভব হয়নি। তার গতিবিধি এবং গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বনকর্মী এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
১৫ ডিসেম্বর ওড়িশার টাইগার রিজার্ভ থেকে পালানো ৩ বছরের বাঘিনী জিনাত বর্তমানে পুরুলিয়ার ঘন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার গলায় থাকা রেডিও কলারের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, সে এখন রাইকা পাহাড় এলাকায় অবস্থান করছে। বন দফতরের কর্মীরা স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জিনাতের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে বাঘিনী কখনও ডানদিকে, কখনও বাঁদিকে চলায় তার অবস্থান নির্ণয় করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞ দলকে ডেকে আনা হয়েছে জিনাতকে ধরার জন্য। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায় বললেন, 'জিনাত গর্ভবতী হলে ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে না। সেজন্য বিশেষ পদ্ধতিতে তাকে ধরতে হবে। কিন্তু বাঘটি গর্ভবতী কিনা, সেবিষয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সাধারণত বাঘ গর্ভবতী হলে বা সঙ্গে শাবক থাকলে খুব হিংস্র হয়।'
জিনাতের উপস্থিতির কারণে ঝাড়গ্রামের জুয়ারধরা, জবলা, ছুরিমারা, তেলিঘানা, ওড়লী, দলাদলি, আমলাশোল, ময়ূরঝর্ণা এবং কাঁকড়াঝোড় এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাষাবাদ, পশুপালন, এবং জঙ্গলের কাছে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ও কেন্দ্রীয় ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর অন্যতম প্রতিনিধি শমীক দত্ত বললেন, 'সোজাসুজি এগোচ্ছে না বাঘিনী। কখনও ডানদিক, কখনও বাঁদিকে এগোচ্ছে। সাধারণত বাঘের তুলনায় বাঘিনী হিংস্র কম হয়। কিন্তু সঙ্গে শাবক থাকলে বাঘিনী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। ফলে হিংস্র হয়ে ওঠে তখন। উদ্ধারকারী দলকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। কোনওভাবেই যাতে লালগড়ের মতো ঘটনা না ঘটে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।'
বন দফতরের অভিজ্ঞ কর্মীরা রাইকা পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে জিনাতকে খাঁচাবন্দি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এই কাজ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাঘিনীর হিংস্রতা, তার চলাফেরা এবং গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা রক্ষা করা বন দফতরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবে ধরা পড়বে বাঘিনী জিনাত? কবে গ্রামবাসীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবেন? তারই অপেক্ষায় রয়েছে পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রামের মানুষ।