বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভের বাদাবন সুন্দরবন বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য। বাঘের পাশাপাশি হরিণ, বুনো শুয়োর কিংবা কুমির এবং দেশ-বিদেশের পরিযায়ী পাখিদের বাসস্থান এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। তাই পর্যটকদের কাছে অন্যতম ডেস্টিনেশন সুন্দরবন ভ্রমণ। জলে-জঙ্গলে ঘেরা সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা দল বেঁধে ভিড় করেন সুন্দরবনে। এই পর্যটকদের মধ্যে যেমন রয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা বিদেশির দল তেমনি রয়েছেন ভিনরাজ্যের পর্যটকরাও। ফলে সুন্দরবনে এসে গাইড নিয়ে ঘুরতে গিয়ে ভাষার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়। কারণ সুন্দরবনের গাইডদের অধিকাংশই স্থানীয় মানুষ যারা ইংরেজিতে বিশেষ সড়গড় নন। এই ভাষার অন্তরায় দূর করতেই এবার ট্যুরিস্ট গাইডদের ইংরেজি শেখানোর উদ্যোগ নিল অলাভজনক সংস্থা SHER এবং কলকাতার মার্কিন দূত।
সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দারুণ এক উদ্যোগ নিল নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাসের রিজিওনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ দফতর। এনজিও শের (সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসার্চেস)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ট্যুরিস্ট গাইডদের ইংরেজি শেখানোর উদ্যোগ নিল তারা। সুন্দরবনের ৩৬ জন ইকো-ট্যুরিস্ট গাইডকে ইংরেজি শেখানোর জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল চলতি মে মাসের ২২ তারিখে। সেই কর্মশালা ২৭ তারিখ অবধি চলেছে। ‘সুন্দরবনের মাল্টিপারপাস কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার’-এর স্মার্ট ক্লাসরুমে ৬ দিনের প্রশিক্ষণ শিবির শেষে সুন্দরবনের প্রধান বন সংরক্ষক অজয় দাস অংশগ্রহণকারী গাইডদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন 'ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ক্লাইমেট ভালনারেবল রিজিয়নসে'র একটি হিসেবে চিহ্নিত। ফলে সুন্দরবনে যাঁরা আসেন তাঁদের কাছে এই অঞ্চলের জলবায়ুসংক্রান্ত প্রকৃত স্টেটাসটা ঠিকঠাক ভাবে তুলে ধরাটাও গাইডদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে। বিদেশি পর্যটকও থাকেন। তাঁরা এখানে পা দিয়ে এখানকার জলজঙ্গলের আদি ইতিহাস তথ্য কথা কাহিনি সবই স্থানীয় গাইডের মাধ্যমেই জানেন। কিন্তু জানার পথে একটা বাধা তৈরি করে ভাষা। পর্যটকরা অনেকেই বাংলা বোঝেন না আর স্থানীয় গাইডেরা ইংরেজিতে তেমন সড়গড় নন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে গাইড আর ট্যুরিস্টদের মধ্যে একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়ে চলেছে। যেটা সুন্দরবনের প্রকৃতি ও ট্যুরিজম দু'য়ের পক্ষেই নেতিবাচক হয়ে উঠেছিল। ইংরেজি জানলে, গাইডরা আকর্ষণীয় তথ্য ভাগ করে নেওয়া, সুন্দরবনের সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা ও জলবায়ু সম্পর্কে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। সেই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই SHER সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের অধীনে নাথিভুক্ত ইকো-গাইডদের জন্য ইংরেজিতে কথা বলা শেখানোর কর্মশালার আয়োজন করেছে। কলকাতার মার্কিন দূতাবাস, তাদের ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অধীনে এই কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।