
পুরুলিয়ার জঙ্গলে প্রথমবারের মতো স্লথ ভাল্লুকের (Melursus ursinus) উপস্থিতি ক্যামেরায় ধরা পড়ল। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রজাতির দেখা পাওয়ার দাবি থাকলেও, এবারই প্রথম প্রমাণ হাতে পেল রাজ্য বন দফতর। দুবছর আগে জেলার বিভিন্ন জঙ্গলে বসানো ট্র্যাপ ক্যামেরায় সম্প্রতি এই বিরল দৃশ্য ধরা পড়েছে।
বন দফতরের পাশাপাশি, প্যাঙ্গোলিন নিয়ে কাজ করা একটি এনজিওও নিজস্ব ক্যামেরা বসিয়েছিল। গত দুমাসে সরকার ও এনজিও-উভয়ের ক্যামেরায় স্লথ ভাল্লুকের ছবি রেকর্ড হয়েছে। পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ জানান, ছবিগুলি সেপ্টেম্বর মাসে উঠেছে। বিশদ বিশ্লেষণে অন্তত চারটি প্রাপ্তবয়স্ক স্লথ ভাল্লুকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেছে।
বন দফতরের সূত্র অনুযায়ী, স্লথ ভাল্লুকগুলি মূলত কোটশিলা ও ঝালদা বনাঞ্চলে বিচরণ করছে। অযোধ্যা পাহাড়েও পাওয়া গেছে পায়ের ছাপ, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তারা বড় এলাকা জুড়ে ঘোরাফেরা করে।
জানা গেছে, স্লথ ভাল্লুকের উপস্থিতি একটি সুস্থ স্থলজ উদ্ভিদমণ্ডল এবং সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্রের লক্ষণ। বড় শিকারীরা সাধারণত এদের বিরক্ত করে না, কারণ বিরক্ত করলে এরা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ভাল্লুকের পরিত্যক্ত গর্ত পরে প্যাঙ্গোলিন ও শজারুর মতো ছোট প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গত কয়েক বছর ধরে পুরুলিয়ার জঙ্গলে ক্যামেরায় ধরা পড়ছে একের পর এক বিরল প্রাণী। এর মধ্যে রয়েছে, মরচে দাগযুক্ত বিড়াল, হানি ব্যাজার, প্যাঙ্গোলিন, ডোরাকাটা হায়েনা ও ভারতীয় নেকড়ে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোটশিলা রেঞ্জের সিমনি বনে প্রথমবারের মতো মরচে-দাগযুক্ত বিড়ালের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। তার আগেই, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ধরা পড়েছিল হানি ব্যাজার, বাংলার বনে যার এটি ছিল প্রথম রেকর্ড।
গত পাঁচ বছরে ক্যামেরা ফুটেজে আরও দেখা গেছে ডোরাকাটা হায়েনা ও ভারতীয় নেকড়ে, যা পুরুলিয়াকে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য হটস্পট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।