
২০২৫ সালে দাঁড়িয়েও এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, যা ভূত-প্রেত-অশরীরির মতো বিষয়গুলি নিয়ে মানুষের মনের দুর্বল মানসিকতাকে তুলে ধরে। ভূতের আতঙ্কে সরগরম পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের সোনাইজুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অভিযোগ, স্কুলের শৌচাগারে এক ছাত্রীর চুল ধরে ‘অদৃশ্য কেউ’ টান দিয়েছে। ঘটনার দিন ওই ছাত্রী শৌচাগারে যাওয়ার পর হঠাৎই চিৎকার করে ওঠে। সহপাঠীরা দৌড়ে গিয়ে দেখে সে ভয়ে কাঁপছে। ছাত্রীর দাবি, ভিতরে হঠাৎ কেউ তার চুল জোরে টেনে ধরে। এর পরেই সে অচৈতন্য হয়ে যায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয় ছাত্রীকে। সিটি স্ক্যান, রক্তে সোডিয়াম-পটাশিয়াম, হিমোগ্লোবিন-সহ নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হলেও কোনও শারীরিক সমস্যা ধরা পড়েনি। প্রাথমিক আকস্মিকতা কাটিয়ে ফের স্কুলে যাওয়া শুরু করে ছাত্রীটি। কিন্তু তারপর থেকেই স্কুলের অন্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চুল-টানা ভূতের রটনা। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, অনেকেই শৌচাগারে যেতে ভয় পেতে শুরু করে। এই অবস্থায় স্কুলে পৌঁছয় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ৬ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। তারা শিশুদের সঙ্গে কথা বলে বোঝাবার চেষ্টা করে, এমন কোনও আতঙ্কের কারণ নেই। ভূত-প্রেত বলে প্রকৃত অর্থে কিছু নেই এবং এই ঘটনার পিছনে মনস্তাত্ত্বিক কারণ বা ভুল ধারণাই দায়ী। এমনকী ভূতের গল্পকে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণ করতে বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, 'কেউ সেই ভূতের ছবি তুলতে পারলে তাকে দেওয়া হবে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার।' স্বাভাবিকভাবেই এই ঘোষণা বিদ্যালয়ে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিজ্ঞান মঞ্চের দাবি, প্রমাণ চেয়ে এমন পুরস্কার ঘোষণা করলে ভয় ও গুজব দুটোই দ্রুত কমে যায়।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রী ছোটোবেলা থেকেই বাড়িতে নিয়মিত ভূত-প্রেতের গল্প শোনে। তার বড় বোনও লাগদা স্কুলের হোস্টেলে পড়ত। সে-ও এই ধরনের ভয় পেয়েছে বলে দাবি করে কিছুদিন আগে বাড়ি ফিরে এসেছে। এই পরিবেশের ফলেই শিশুটির মনে ভয় তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরাও।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এই গোটা ঘটনাই একটা রটনা। ছোট ছাত্রছাত্রীরা জীবনের শুরুতেই অন্ধবিশ্বাসের ভয় নিয়ে বড় হোক, সেটা আমরা চাই না। তাই তাদের বোঝাতে এবং আতঙ্ক থেকে মুক্ত করতে স্কুলে গিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।' এই ঘটনার পর স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক সাহস বাড়াতে বিশেষ সচেতনতা কর্মসূচি নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। নয়ন মুখোপাধ্যায় আরও বলেন, 'এই স্কুলের চুল-টানা ভূতের গল্প একটি রটনা মাত্র। ছাত্রছাত্রীরা তাদের জীবন শুরু করছে এবং সেই সময় এই ভূতের আতঙ্ক থেকে যাতে তারা মুক্তি পায়, সেই জন্য সেই স্কুলে গিয়ে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে।'
রিপোর্টার: সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়