বয়ঃসন্ধির সময় কিশোরীদের নিজেদের যৌন ইচ্ছায় নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত। বছর দুই আগে কলকাতা হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। যদিও সেই মামলায় নাবালিকাকে ধর্ষণে অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করা হয়েছিল। তাই নিয়েও তুঙ্গে উঠেছিল বিতর্ক। তবে সুপ্রিম কোর্টও সেই রায়-ই বহাল রাখল। ১৪২ ধারায় বিশেষ ক্ষমতার অধীনে অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করল সর্বোচ্চ আদালত।
ঘটনাটি কী?
২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের ১৪ বছর বয়সী এক নাবালিকা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর জানা যায় যে সে ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে বিয়ে করেছে। এরপরেই মেয়েটির পরিবার ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। স্থানীয় আদালত পকসো আইনে ওই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে। তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
২০২৩ সালে, কলকাতা হাইকোর্ট ওই ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, বয়ঃসন্ধির কিশোরীদের 'যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ' করা উচিত। তাদের মনে রাখতে হবে যে, সমাজ তাদের এই ধরনের পরিস্থিতিতে 'লুজার' হিসেবে দেখে। এই পর্যবেক্ষণ ঘিরেই সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল শোরগোল ওঠে। মামলায় যায় সুপ্রিম কোর্টে।
কিন্তু আদালতের এই পর্যবেক্ষণ কেন?
নাবালিকা নিজে তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। বরং তাকে সবরকমভাবে বাঁচাতেই চেয়েছে। সে স্বেচ্ছায় পালিয়ে বিয়ে করেছে বলেও জানায়। এর পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গে খুশি ও সংসার করতে চায় বলেও জানায়। পরিবারের বক্তব্যের সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থান নেয় সে। সেই কারণেই হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত নেয়।
একই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এক রিপোর্ট উল্লেখ করে বিচারপতি অভয় ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ জানায়, এই মামলার ভুক্তভোগী(কিশোরী, যিনি এখন অভিযুক্তের স্ত্রী) নিজে এই কাজটিকে অপরাধ হিসেবে দেখেননি। বরং আইনি জটিলতা, মামলা-মোকদ্দমার কারণেই তিনি আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, 'ভুক্তভোগী নিজে এটি জঘন্য অপরাধ হিসেবে দেখেনি। সমাজ তার সমালোচনা করছে, আইনব্যবস্থা তাকে হতাশ করেছে, পরিবার তাকে পরিত্যাগ করেছে। এর ফলে তাকে পুলিশ, আইন এবং অভিযুক্তকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য ক্রমাগত লড়াই করতে হয়েছে।'
এই দম্পতির সন্তানও আছে। তাঁরা একসঙ্গে থাকেন।
বিচারপতি ওকা বলেন, অভিযুক্তের প্রতি ভুক্তভোগী মানসিক অ্যাটাচমেন্ট রয়েছে। এই মামলা সকলের 'চোখ খুলে দেওয়ার মতো ঘটনা' বলে অভিহিত করে শীর্ষ আদালত বলেছে, এটি 'আইনের ফাঁকফোকর' তুলে ধরেছে।
এই বিষয়ে আপনার কী পর্যবেক্ষণ? জানান কমেন্টে।