নবাবী তালুক মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। যার পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে নবাবী ইতিহাস, স্থাপত্য নিদর্শন। নবাবী আমলের স্থাপত্য নিদর্শন চাক্ষুষ করতে প্রতি বছরই দেশ বিদেশের পর্যটকদের পাশাপাশি ইতিহাস পিপাসু মানুষ ছুটে যান সেখানে। আর মুর্শিদাবাদের নবাবদের নিদর্শন ঘুরে দেখতে অধিকাংশ পর্যটকের প্রথম পছন্দ ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা (Tanga)।
মুর্শিদাবাদে নবাবী শাসনের অবসানের প্রায় আড়াই শতাব্দী পরেও সেই আমলের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে প্রায় তিন শতাধিক টাঙ্গা। তাতে চেপে মুর্শিদাবাদ ঘুরতে ঘুরতে কার্যত নবাবদের আমলে ফিরে যান পর্যটকরা। অথচ করোনার জেরে মুর্শিদাবাদের টাঙ্গার অস্তিত্ব এখন সংকটে। এক বছরের বেশি সময় ধরে পর্যটকদের প্রায় দেখা নেই বললেই চলে। বাড়ির সামনে দাড়িয়ে রয়েছে টাঙ্গা। অযত্নে ধুলো জমছে। পাশেই বাঁধা রয়েছে ঘোড়া। পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবের সেটির শরীরেও দুর্বলতার ছাপ। সংসার প্রতিপালনের তাগিদে অনেক টাঙ্গাচালক বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রী বা অন্যপেশায় পা বাড়িয়েছেন। টাঙ্গা চালকরা জানাচ্ছেন, গতবছর লকডাউন জারি হতেই মুর্শিদাবাদ পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ে। তখন থেকে শুরু হয় টাঙ্গা চালকদের দুর্দশা। সংসার চালানো একপ্রকার দূরহ হয়ে ওঠে তাঁদের কাছে।
করোনার প্রভাব কিছুটা কমতেই পুজো থেকে ফের পর্যটকরা যাতায়াত শুরু হয়। কিন্তু ছয় মাস যেতে না যেতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মুর্শিদাবাদ আবারও পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে ফের একবার রোজগার শূন্য হয়ে পড়েন টাঙ্গাচালকরা। এক টাঙ্গা চালক বলেন, 'আমাদের দুটো সংসার। ঘোড়ার খাবারের জন্য প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টাকা খরচ হয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে চরম দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। অন্য কাজ করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। মাঠ থেকে ঘাস কেটে এনে খাওয়াই। এভাবে আর কিছুদিন চললে ঘোড়াগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে বেশকিছু ঘোড়া দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি জীবন জীবিকার তাগিদে টাঙ্গাচালকরাও স্থায়ীভাবে অন্য পেশায় চলে যাবেন।'
টাঙ্গা ইউনিয়নের সম্পাদক মনু শেখ বলেন, 'গত দেড় বছরে মোট মাস পাঁচেক পর্যটকদের দেখা পাওয়া গিয়েছে। ফলে টাঙ্গা চালকরা চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে মুর্শিদাবাদের মাটি থেকে নবাবী আমলের ঐতিহ্য এই টাঙ্গা হারিয়ে যাবে।'