বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য চাকরির ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। সংরক্ষণ বিরোধী ছাত্র-যুবদের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ (কমপ্লিট শাটডাউন) কর্মসূচির জেরে কার্যত স্তব্ধ বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকা-সহ সে দেশের বিভিন্ন শহর বৃহস্পতিবার বন্ধের চেহারা নিয়েছে। হাসপাতাল, সংবাদমাধ্যম এবং জরুরি পরিষেবা ছাড়া প্রায় সমস্ত বেসরকারি দফতর, দোকান-বাজার বন্ধ।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, হাসিনা সরকার নিজেদের দলকে শক্তিশালী করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে রাস্তায় গুলি-বোমা বর্ষিত হচ্ছে, ছাত্রদের মৃত্যু মিছিল চলছে। রক্তাক্ত রাজপথের দৃশ্য রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লিখেছেন, "রাজাকারের সন্তানরাও যে রাজাকার হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই, যেমন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করবে তার নিশ্চয়তা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও রাজাকারের সন্তানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছেন, তার মেয়ের বিয়েও রাজাকার পরিবারে দিয়েছেন। সরকারের দায়িত্ব সন্তানেরা সুশিক্ষিত হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করবে তা নিশ্চিত করা। ১৬ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থেকেও যদি এত রাজাকারের আদর্শের লোক সৃষ্টি হয়, তাহলে কি বলা যায় না সরকারের দেশ পরিচালনায় গলদ ছিল? বুদ্ধিজীবিদের দায়িত্ব সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া। তারা কি সেই দায়িত্ব পালন করেছেন?"
এদিকে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, গত তিন দিনে সংরক্ষণ বিরোধী পড়ুয়াদের বিক্ষোভ ঘিরে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ২৭। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সংরক্ষণ বিরোধীদের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ (কমপ্লিট শাটডাউন) কর্মসূচির মধ্যে হিংসায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২১ জনের। তাঁদের অর্ধেকই ঢাকায় হিংসার বলি। সোমবারও ঢাকার মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা, যাত্রাবাড়িতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের উপর শাসকদলের ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র লীগ’ হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে, বিরোধী বিএনপি এবং জামাতের কর্মীরা হিংসায় উস্কানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ হাসিনা সরকারের।