Advertisement

ভোটার লিস্টে বাবা ও ছেলের বয়সের ফারাক ৫ বছর! বর্ধমানে অঙ্ক মেলাতে হিমশিম কমিশন

SIR প্রক্রিয়ার ঝারাইবাছাই পর্ব শুরু হতেই অদ্ভুত ঘটনা সামনে আসছে। এই যেমন বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট ব্লকের শীতলগ্রামের ঘটনাই ধরুন। সেই গ্রামে ভোটার তালিকায় আজব বয়সের গরমিল। এই তালিকায় বাবার বয়স ৬৩। আর ছেলেদের বয়স ৫৯ ও ৫৮। অর্থাৎ পাঁচ বছর বয়সে দুই ছেলের বাবা! নির্বাচন কমিশনের নথিতে উঠে এসেছে এই অসম্ভব তথ্য। পাঁচ বছর বয়সে দুই ছেলের বাবা শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এমনই এক আজব তথ্য উঠে এসেছে নির্বাচন কমিশনের নথি ঘেঁটে।

ভোটার লিস্টে অস্বচ্ছতাভোটার লিস্টে অস্বচ্ছতা
স্বপন কুমার মুখার্জি
  • কলকাতা,
  • 18 Dec 2025,
  • अपडेटेड 1:33 PM IST
  • SIR প্রক্রিয়ার ঝারাইবাছাই পর্ব শুরু হতেই অদ্ভুত ঘটনা সামনে আসছে
  • এই যেমন বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট ব্লকের শীতলগ্রামের ঘটনাই ধরুন
  • সেই গ্রামে ভোটার তালিকায় আজব বয়সের গরমিল

SIR প্রক্রিয়ার ঝারাইবাছাই পর্ব শুরু হতেই অদ্ভুত ঘটনা সামনে আসছে। এই যেমন বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট ব্লকের শীতলগ্রামের ঘটনাই ধরুন। সেই গ্রামে ভোটার তালিকায় আজব বয়সের গরমিল। এই তালিকায় বাবার বয়স ৬৩। আর ছেলেদের বয়স ৫৯ ও ৫৮। অর্থাৎ পাঁচ বছর বয়সে দুই ছেলের বাবা! নির্বাচন কমিশনের নথিতে উঠে এসেছে এই অসম্ভব তথ্য। পাঁচ বছর বয়সে দুই ছেলের বাবা শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এমনই এক আজব তথ্য উঠে এসেছে নির্বাচন কমিশনের নথি ঘেঁটে।

কী ঘটেছে?

পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট ব্লকের শীতলগ্রামের ১৭৫ নম্বর বুথের ভোটার তালিকায় ধরা পড়েছে এই বিস্ময়কর ‘বাবা-ছেলে’ সম্পর্ক। এসআইআর (SIR) এনুমারেশন ফর্ম যাচাই করতে গিয়েই বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের।

২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় বাবা ও দুই ছেলের বয়সের বিস্ময়কর গরমিল সামনে আসতেই চাঞ্চল্য পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমার মঙ্গলকোট থানার শীতলগ্রাম এলাকায়। ভোটার তালিকা অনুযায়ী, শীতলগ্রামের বাসিন্দা সরোজ মাঝির বয়স ৬৩ বছর। অথচ তাঁর দুই ছেলে বলে নথিভুক্ত লক্ষ্মী মাঝির বয়স ৫৯ বছর এবং সাগর মাঝির বয়স ৫৮ বছর। অর্থাৎ, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে বাবা হয়েছেন সরোজ মাঝি। যা বাস্তবে সম্পূর্ণ অসম্ভব। ভোটার তালিকা অনুযায়ী ৪৩৪ ক্রমিক নম্বরে নাম রয়েছে গ্রামের বাসিন্দা সরোজ মাঝির। তাঁর বয়স উল্লেখ রয়েছে ৬৩ বছর। ঠিক পরের ক্রমিক নম্বর ৪৩৫-এ রয়েছে লক্ষী মাঝি, বয়স ৫৯ বছর এবং ৪৩৭ নম্বরে রয়েছে সাগর মাঝির নাম, বয়স ৫৮ বছর। ভোটার তালিকায় লক্ষী ও সাগর মাঝিকে সরোজ মাঝির দুই ছেলে হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বয়সের এই অমিল ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গিয়েছে, প্রায় ২২ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে লক্ষ্মী মাঝি ও সাগর মাঝি শীতলগ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। অভিযোগ, ২০০৬ সালে তাঁদের ভোটার তালিকায় নাম তোলা হয়। সেই সময় গ্রামের বাসিন্দা সরোজ মাঝিকে বাবা হিসেবে দেখিয়ে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও নাম ওঠার সময় থেকেই বয়স সংক্রান্ত ভুল ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের। এনুমারেশন ফর্ম পরীক্ষা করার সময় এই লজিক্যাল এরর ধরা পড়তেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। পরে তদন্তে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।

Advertisement

জানা যায়, লক্ষ্মী মাঝি ও সাগর মাঝি আসলে সরোজ মাঝির প্রকৃত সন্তান নন। তারা দু’জনই বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং অবৈধভাবে ভারত প্রবেশ করেন বলে স্বীকার করেছেন।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে লক্ষ্মী মাঝির স্ত্রী রাজশ্রী মাঝি জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রাণ হাতে করে তাঁরা প্রথমে মুর্শিদাবাদে আশ্রয় নেন। পরে কাজের সন্ধানে ২০০৬ সালে কৃষি শ্রমিক হিসেবে মঙ্গলকোটের শীতলগ্রামে আসেন। সেখানেই স্থানীয় বাসিন্দা সরোজ মাঝিকে ‘নকল বাবা’ সাজিয়ে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করা হয়। ঘটনার কথা স্বীকার করে ক্যামেরার সামনে কাতর মিনতিতে রাজশ্রী মাঝির বক্তব্য, “আমাদের মেরে ফেলুন, কিন্তু বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবেন না।”

এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতেই এই বয়সের গরমিল নজরে আসে। বাবা ও ছেলেদের বয়সের অসামঞ্জস্য প্রকাশ্যে আসার পর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নজরে যায়। দুই ভাইয়ের পরিবার এনুমারেশন ফর্ম জমা দিলেও, তাঁদের শুনানিতে ডাকা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। বর্তমানে লক্ষ্মী ও সাগর মাঝির দুই পরিবারেই রয়েছে ভারতীয় ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং রেশন কার্ড। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পেয়ে আসছেন। তবে দুই ভাইয়ের পরিবার স্বীকার করেছে, সরোজ মাঝি তাঁদের প্রকৃত বাবা নন এবং তাঁরা বাংলাদেশ থেকে এসে এখানে বসবাস করছেন। অন্যদিকে সরোজ মাঝিও স্বীকার করেছেন, লক্ষ্মী ও সাগর তাঁর ছেলে নন। তাঁর নিজের দুই ছেলে। তাঁরা এরা নয় ।

এদিকে অভিযুক্ত নকল বাবা সরোজ মাঝির স্পষ্ট বক্তব্য, “ওরা আমার ছেলে নয়। আমি আর কোনও ছেলে চাই না।” বাংলাদেশ থেকে আসার পরে তৎকালীন এলাকার সিপিআইএম নেতাদের কথায় তাঁকে বাবা দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলা হয়েছিল। বয়সের এই ভুল এতদিন নজরে না এলেও এখন প্রকাশ্যে এসেছে। ভুল সংশোধনে তিনি প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এনুমারেশন ফর্মের তথ্যে অসামঞ্জস্য ধরা পড়ার পরই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি একটি স্পষ্ট লজিক্যাল এরর। অভিযুক্তদের শুনানির জন্য নোটিশ পাঠানো হবে। তারা যদি তাদের দাবির পক্ষে প্রামাণিক নথি দেখাতে ব্যর্থ হন, তাহলে নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভোটার তালিকার নির্ভুলতা এবং যাচাই প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে প্রশাসনিক মহলে।

 

এ দিকে ঘটনার দায় নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। সিপিআইএমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বামফ্রন্ট আমলে স্থানীয় লোকেরাই সেই সময় এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করে নাম তুলেছিল। দলের তরফে কেউ সরাসরি জড়িত ছিল না বলে দাবি করা হয়েছে। বয়সের এই গরমিল কীভাবে হল, তা তখন যাঁরা ভোটার তালিকার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরাই বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছে সিপিআইএম। পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বামফ্রন্ট আমলে ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই যা পাওয়া গিয়েছে তাই ভোটার তালিকায় নাম তুলে দেওয়া হয়েছে। বাবা ও ছেলের বয়সের এমন পার্থক্য কখনওই স্বাভাবিক নয়। যে সরকারের আমলে এই নাম নথিভুক্ত হয়েছিল, তাদেরই দায় নিতে হবে। পাশাপাশি তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল।

অন্যদিকে বিজেপির দাবি, ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে বামদল এই ধরনের অনিয়ম করেছিল। একই পথে এখন তৃণমূল সরকারও হাঁটছে বলে অভিযোগ তাদের। (রিপোর্টার সুজাতা মেহরা)

Read more!
Advertisement
Advertisement