দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি এলাকায় ফের দেখা দিল বাঘের আতঙ্ক। বৃহস্পতিবার সকালে কুলতলির নগেনাবাদ এলাকায় মাকড়ি নদীর পারে ম্যানগ্রোভের ঝোপে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, সুন্দরবনের আজমলমারির জঙ্গল থেকে নদী পেরিয়ে গ্রাম লাগোয়া বাদাবনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে একটি বাঘ।
বন দফতরের তৎপরতা
বাঘ ঢোকার খবর পাওয়ার পরই এলাকায় পৌঁছে যান বন দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) নিশা গোস্বামী সংবাদমাধ্যমকে জানান, বাঘ গ্রামে ঢোকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখনও সরাসরি বাঘের দেখা মেলেনি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় জাল দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন সহকারী বিভাগীয় বনাধিকারিক (এডিএফও) অনুরাগ চৌধুরী, রায়দিঘির রেঞ্জার শুভায়ু সাহা এবং চিতুড়ির বিট অফিসার শামিম আহমেদ। তাঁদের নেতৃত্বে বন দফতরের দলটি বাঘের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।
পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি
এ ঘটনা নতুন নয়। গত রবিবার রাতে নগেনাবাদ থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে শ্রীকান্ত পল্লি-কিশোরীমোহনপুর এলাকায়ও একই ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, বাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছিলেন তাঁরা। পরে বন দফতরের তরফে জানানো হয়, বুধবার বাঘটিকে জঙ্গলে ফিরে যেতে দেখা গিয়েছে।
বাঘ লোকালয়ে ঢোকার কারণ
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া’ (ডব্লিউটিআই)-র সুন্দরবন বিভাগের এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাঘ যাতে কোনও অবস্থাতেই লোকালয়ে না ঢোকে, সে জন্য বন দফতর নজরদারি চালাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গলের খাদ্য সংকট বা জলের অভাবের কারণে সুন্দরবনের বাঘগুলি মাঝেমধ্যে লোকালয়ে চলে আসে।
গ্রামবাসীদের উদ্বেগ ও সতর্কতা
গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হলেও বন দফতরের কর্মীরা তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি, বাঘ যাতে গ্রামে ঢুকে পড়তে না পারে, তার জন্য সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে
বন দফতরের তৎপরতায় আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে বাঘটির খোঁজ পাওয়া না গেলে গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। সুন্দরবনের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এই ধরনের বাঘের আনাগোনা একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে উঠেছে।
সুন্দরবনের সঙ্গে গ্রামবাসীদের সহাবস্থান দীর্ঘদিনের হলেও বাঘের এই ধরনের আচরণ তাদের জীবনে নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বন দফতরের তৎপরতা এবং সঠিক পদক্ষেপই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।