হাসপাতালের কত না রকমফের রয়েছে। সরকারি থেকে বেসরকারি। সেখানে আনা হয় নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি। যাতে আর ভাল চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায়। প্রাণীদের চিকিৎসার জন্যও রয়েছে কেন্দ্র।
তবে কোনও গাছে পোকার আক্রমণ হলে কী হবে? বা অন্য কোনও কারণে যদি সেটা নষ্ট হতে বসে? এমনই ভাবনা এসেছিল বর্ধমানের একদল পরিবেশপ্রেমীর মাথায়। আর তাই তাঁরা খুলে ফেললেন গাছ হাসপাতাল। তাঁদের দাবি, এটি দেশে প্রথম। গাছের চিকিৎসার জন্য খোলা হয়েছে হেল্পলাইনও।
তাঁদের বক্তব্য, আমরা সবাই হাসপাতালের কথা জানি। অসুস্থ হলে আমরা সেখানে যাই। আমরা প্রাণী হাসপাতালের কথাও শুনেছি। আমরা জানি, জীবন মানুষের মতো প্রাণী, পাখি, গাছেরও প্রাণ আছে। কিন্তু গাছের জন্য নেই কোনও হাসপাতাল!
এমন কী ব্যবস্থা আছে, যেখানে আমার বাড়ির ছোট চারা গাছটা একটু ঝিমিয়ে পড়লে কোথাও নিয়ে গিয়ে আবার সতেজ করে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারব? কোথাও নেই সে ব্যবস্থা। কৃষি আধিকারিক কিংবা গাছমাস্টারের মতো কিছু মানুষের কল্যাণে হয়তো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামত পাওয়া যেতে পারে। তবে গাছের ডাক্তার-সহ হাসপাতালের ব্যবস্থা এই প্রথম।
নববর্ষের প্রথম দিন থেকে শুরু হল সেই হাসপাতাল। বর্ধমানের পাল্লা রোড পল্লীমঙ্গল সমিতির উদ্যোগে। এই উদ্য়োগের অনুপ্রেরণা ও উপদেষ্টা গাছমাস্টার অরূপ চৌধুরী। সংগঠনের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবকরা সব সময় সচেষ্ট থাকবে কোনও ফোন এলেই সেটার সমাধান করার। খোলা হয়েছে দু'টি হেল্পলইন নম্বরও। সেগুলি হল- ৬২৯৫২৬৩৮৬৮ / ৯০৬৪৯৯৩১৩৬।
পাল্লা রোড পল্লীমঙ্গল সমিতির সম্পাদক সন্দীপন সরকারের রাস্তার নষ্ট হতে বসা গাছ সারিয়ে তোলেন। তাঁর বাড়ির পাশে রয়েছে এক স্বাস্থ্য়কেন্দ্র। সেখানে রয়েছে অনেক গাছ। পরিচর্যার অভাবে সেখানকার গাছ নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিল। এরপরই মাথায় আসে হাসপাতাল তৈরির ভাবনা।
ওই সংগঠনের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া স্মরজিৎ হাজরা জানান, গাছের হাসপাতাল বলে কিছু নেই। ক্ষতিগ্রস্থ কোনও গাছকে কী করে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তা জানাতে এই উদ্যোগ। অনেকের বাড়িতেই গাছ থাকে। তবে কোনও কারণে পোকা ধরলে বা সেটি ঝিমিয়ে পড়লে, কী করলে সেরে উঠবে, সে ব্যাপারে জানানো হবে।
কী করে জানানো হবে? তিনি জানান, সেই গাছের ছবি তুলে পাঠালে সাহায্য করতে পারবেন। পরামর্শ দেবেন বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো যাবে।
তবে এ কাজের জন্য কোনও পয়সা দিতে হয় না। রাজ্যের সব জায়গায় পরিষেবা দেবেন। এমনই পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সব জেলায় দল গঠন করছেন। অবসরপ্রাপ্ত ব্য়াঙ্ককর্মী, পুলিশ অফিসার, উদ্ভিদবিদ রয়েছেন সেখানে। মেমারি-১ ব্লকের অনেকগুলি নার্সারিও সাহায্য করছে। তাঁরা ঠিক করছেন, মাসে মাসে গিয়েও চিকিৎসা দেওয়ার।