চাকরি হারিয়ে রাস্তায় বসে শিক্ষকরা। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার এহেন দীর্ণ চেহারা দেখে মাথা নত হয়েছে অনেকের। বাংলায় শিক্ষার বেহাল দশা নিয়ে প্রায় রোজদিনই রাজনীতির আকচাআকচি চলে। দুর্নীতি নামক এই কলঙ্কের মধ্যেই যেন এক ফোঁটা আলো দেখালেন পুরুলিয়ার মালতি মুর্মু। আদিবাসী গৃহবধূর এক কীর্তি হাল আমলের শিক্ষায় যেন নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গায়ে প্রত্যন্ত গ্রামে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে কোমর বেঁধে লেগেছেন মালতি। বিনামূল্যে শিশুদের পড়াতে তিনিই 'দিদিমণি' হয়ে উঠেছেন। দুই সন্তান, ঘরকন্নার কাজ সামলে গ্রামের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন মালতি। বাংলার আদিবাসী গৃহবধূর এমন কাণ্ডে মজেছেন সকলেই।
জিলিং সারেং গ্রামের বাসিন্দা মালতি কিন্তু কোনও সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা নন। ইট-বালি-সিমেন্টের স্কুলরুমেও তিনি পড়ান না। টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরেই চলছে 'মালতি দিদিমণি'র পাঠশালা। নিখরচায় গ্রামের শিশুদের সাঁওতালি ভাষায় পড়াচ্ছেন তিনি। অলচিকি হরফ ব্যবহার করে বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন মালতি। এই মুহূর্তে মালতির পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৫ জন।
মালতির কথায়, 'বিয়ের পর যখন গ্রামে এলাম, দেখলাম এখানে শিক্ষার হাল খুব খারাপ। মনে হয়েছিল, কিছু একটা করতে হবে।' তারপরেই বললেন, 'স্বামীর সাহায্যে কয়েক জন বাচ্চাকে প্রথমে পড়ানো শুরু করি। তারপরে ধীরে ধীরে সংখ্যাটা বাড়তে থাকে।'
প্রথমে নিজের বাড়িতেই ক্লাস নিতেন মালতি। ২০২০ সালে গ্রামবাসীদের সাহায্যে ২টি ছোট স্কুলঘর তৈরি করা হয়। তার পর থেকেই সেখানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বাচ্চাদের নিখরচায় পড়ানোর ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মালতি।
স্ত্রীর পাশে সর্বদা থেকেছেন মালতির স্বামী বঙ্কা মুর্মু। তিনি বললেন, 'গ্রামে একটা সরকারি স্কুল রয়েছে। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম নিজেরা কিছু করতে। এমন একটা স্কুল চেয়েছিলাম, যেখানে বাচ্চারা তাদের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করতে পারবে।'
মালতিকে শিক্ষিকা হিসেবে পেয়ে খুশি গ্রামের বাসিন্দারাও। সুনীতা মাণ্ডি নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, 'আমাদের বাচ্চারা এখন সাঁওতালিতে লেখাপড়া করছে। যেটা কখনও ভাবতেও পারিনি। মালতি সত্যিই গ্রামটাকে বদলে দিয়েছে।'