বীরভূমে ফের তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এবার দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে যুযুধান দুই নেতা — জেলা পরিষদের সভাপতি কাজল শেখ ও মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী।
এই দ্বন্দ্ব ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কাজল শেখের দাবি, দীর্ঘদিন হয়ে গেল কোর কমিটির বৈঠক ডাকা হচ্ছে না। আর তার জন্য সরাসরি বিকাশ রায়চৌধুরীকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘বিকাশ রায়চৌধুরীর বয়স হয়েছে, তাই উল্টোপাল্টা বলছেন।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, কোর কমিটির বৈঠক না ডেকে মূলত মুখ্যমন্ত্রীকেই অবমাননা করা হচ্ছে। তাঁর মতে, ‘এইভাবে দলের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এরা দলের প্রকৃত সৈনিক নন।’
তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই। কোর কমিটির বৈঠক না হওয়া নিয়ে এর আগেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কাজল শেখ ও আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে না? প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
বিকাশ রায়চৌধুরীর পাল্টা জবাব
এই প্রশ্নের জবাবে এবার মুখ খুললেন কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বায়ক হলেও, অনুব্রত মণ্ডলই দলের জেলা সভাপতি ও কোর কমিটির চেয়ারম্যান। তাই সিদ্ধান্ত তিনিই নেন। তিনি যখন বলবেন, তখনই বৈঠক হবে।’
এছাড়াও বিকাশ দাবি করেন, শেষ কোর কমিটির বৈঠকে নির্দিষ্ট করে কোনও তারিখ ধার্য হয়নি। আলোচনা হয়েছিল, অনুব্রত মণ্ডল সময় দিলেই বৈঠকের দিন নির্ধারণ হবে। অর্থাৎ, গোটা বিষয়টির দায় কার্যত অনুব্রত মণ্ডলের কাঁধেই চাপিয়ে দেন বিকাশ রায়চৌধুরী।
এই পরিস্থিতিতে দলের কর্মীদেরই একাংশ প্রশ্ন তুলছেন— মুখ্যমন্ত্রী নিজে যে কোর কমিটি গঠন করেছিলেন জেলা পরিচালনার উদ্দেশ্যে, আজ তার অস্তিত্ব কোথায়? নেত্রীর গঠিত এই কোর কমিটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন কার্যত অদৃশ্য়ই হয়ে উঠছে।
বীরভূমে বিকাশ রায়চৌধুরী ও কাজল শেখের মধ্যে এই কোন্দল দলের অন্দরেই নতুন করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, আসন্ন নির্বাচনের আগে এই ধরনের প্রকাশ্যে সংঘর্ষ দলকে আরও চাপে ফেলতে পারে।
একদিকে কোর কমিটি নিয়ে নেতাদের অভিযোগ, অন্যদিকে অনুব্রতর ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী গঠিত এই কমিটির ভবিষ্যৎ যে এখন ধোঁয়াশার মুখে, তা বলাই যায়।
সংবাদদাতা: শান্তনু হাজরা