সেবক রংপো রেলপথ নিয়ে এর আগে কম জল ঘোলা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে টানেল ধসে দুজনের মৃত্যু এবং পাঁচজন জখম হওয়ার ঘটনার পর ফের নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে।
নতুন করে বিতর্ক শুরু
এমনিতেই এই এলাকায় রেলপথ তৈরির বিরোধিতা করে অনেক বিক্ষোভ আন্দোলন হয়েছে। এখানে এভাবে পাহাড় কেটে টানেল তৈরি করে ট্রেন চলাচল চালু করলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ থেকে ভূগোলবিদরা। বিক্ষোভ আন্দোলনও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু উন্নয়নের নেশায় বুঁদ থাকায় এসব দাবি গুরুত্ব দেয়নি সরকার। আদালতেও পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে কাজ শুরুর অনুমতি মেলে।
বর্ষায় নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ
ভূগোলবিদ ডঃ সুবীর সরকার জানিয়েছেন কালিঝোরাতে তিস্তা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হওয়ার পর আগের চেয়ে বেশি ধস নামছে। রেল প্রকল্পের কাজ যতদিন চলবে, ভূমিধস নামার প্রবণতা ও বাড়তে থাকবে। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে এ ধরণের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
সাবধানতা যাচাই করার আশ্বাস ঠিকাদার সংস্থার
ঠিকাদার সংস্থা ইরকন এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে। সাবধানতা এবং সর্তকতা অবলম্বন করে কাজ হচ্ছে তবু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। আসলে প্রকৃতির উপর কারও হাত নেই। তবে ফের সতর্কতা ও সুরক্ষা যাচাই করে কাজ করা হবে।
নরম পাথরের পাহাড়
এই এলাকায় এমনিতেই ধসপ্রবণ। পাথরের পাশাপাশি নরম মাটি এবং তুলনামূলক নতুন শিলা দিয়ে তৈরি। যার ফলে এখানকার পাহাড় গঠন প্রক্রিয়া এখনও চলছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কোনও কম্পন মাটি এবং পাথরের ভিত আলগা করে দিচ্ছে। ফলে উপরিভাগ থেকে খসে পড়ছে চাঙ্গর কিংবা পাথর।
স্থানীয় মানুষের বিরোধ
উত্তরবঙ্গ বন জন শ্রমজীবী মানুষের আহবায়ক এল ভুজেল জানিয়েছেন, স্থানীয় মানুষ এই প্রকল্প চাইছে না। প্রচুর বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে। পাশাপাশি রেলপথ চালু হয়ে গেলে একাধিক গোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
নতুন করে হাইকোর্টে আবেদন
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন জমা করবেন বলে জানিয়েছেন নেসপনের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র ঘোষ। মহানন্দা অভয়ারণ্য এবং বনবস্তিগুলির স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে এই প্রকল্পের ফলে বলে জানিয়ে তাদের এই স্থগিতাদেশের দাবি।
২০০৯ সালে সূচনা
এর আগে ২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যাওয়ার এই রেলপথ স্থাপনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তারপর দীর্ঘ বছর কোনও পদক্ষেপ হয়নি। অবশেষে ২০১৬ সালে এ নিয়ে নতুন করে উদ্যোগ শুরু হয়। ২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরু হয়। সেবক থেকে সরাসরি সিকিমের রংপো পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন শুরু হয়। পাহাড়ি দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে পাহাড়ের ভিতর দিয়ে টানেল তৈরি করে রেলপথ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।