
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকার শান্ত গ্রামাঞ্চল কুলতলিতে একটি অনন্য প্রেমের কাহিনী সামাজিক উদাহরণ হয়ে দাঁড়াল। সমাজের সমালোচনা এবং চোখরাঙানি উপেক্ষা করে রিয়া সর্দার ও রাখী নস্কর একসঙ্গে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মন্দিরবাজারের রিয়া ও কুলতলির রাখী দু’জনই নৃত্যশিল্পী। প্রথম পরিচয় ফোনের মাধ্যমে, বন্ধুত্ব থেকে ক্রমে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।
তবে যাত্রা সহজ ছিল না। রিয়া যখন সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানান, তিনি সমর্থন পাননি। এরপরও নিজের ভালোবাসাকে অটুট রাখতে রাখীর বাড়িতে যান। রাখীর পরিবার তাঁদের পাশে দাঁড়ায় এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থানীয় মন্দিরে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। মন্দিরেই অনুষ্ঠিত হয় মালাবদল, সিঁদুরদান এবং সাতপাকসহ সমস্ত রীতি-নীতি।
সংবাদমাধ্যমকে রাখী বলেন, 'দু’বছর ধরে আমাদের সম্পর্ক। ফোনে পরিচয়, তবে আমরা জানতাম একসাথে থাকতে চাই। সমাজ কী বলবে তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।' রিয়া সংযোজন করেন, 'ভালবাসাটাই আসল। কাকে ভালোবাসছি, সেটা বড় বিষয় নয়।'
স্থানীয়রা নবদম্পতির পাশে দাঁড়িয়ে আশীর্বাদ দেন। কেউ কেউ জানান, এমন বিয়ে তাঁরা শুধু ফোনেই দেখেছে, বাস্তবে প্রথমবার দেখলেন। ওদের পাশে থাকতে পেরে ভালো লাগছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষ্মী মিস্ত্রি বললেন, 'আমাদের এসে ওরা দুজন বলল বিয়ে করব। তাই আমরা বিয়ে দিলাম। এর আগে এরকম দেখিনি। শান্তি সঙ্ঘ কালীমন্দিরে বিয়ে দিলাম।'
রামচন্দ্র মিস্ত্রি বললেন, 'ওরা দুজনে ভালোবাসা করে করেছে। ওরা কোনও ছেলের সঙ্গে বিয়ে করবে না। তাই গ্রামের সবাই বিয়ের ব্যবস্থা করলাম।'
'ওরা এসেছিল বিয়ে করতে। আমরা এরকম বিয়ে আগে দেখিনি। আমরা ক্লাবের সবাই মিলে বিয়ে দিলাম।' বললেন জলধর মণ্ডল।
শান্তি সংঘের মন্দিরে, সুন্দরবনের মাঠপথ ও নদীর তীরে নবদম্পতি তাদের নতুন জীবন শুরু করেন। রিয়া-রাখীর গল্প শুধু প্রেম নয়, বরং সাহস, নিজের সিদ্ধান্তের মর্যাদা এবং সমাজের বাঁধা অতিক্রম করার প্রেরণা। এই গল্প নতুন প্রজন্মকে শেখাচ্ছে যে, সত্যিকার ভালবাসা মানে নিজের হৃদয়ের কথা মান্যতা দেওয়া।