চলতি সপ্তাহে বাংলার সব জেলাতেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বঙ্গোপসাগরে ঘণিভূত হওয়া ঘূর্ণাবর্ত বুধবার অর্থাৎ আজ বিকেলেই নিম্নচাপে পরিণত হবে, এমনটাই পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের ৷ শুক্রবারের মধ্যে তা গভীর নিম্নচাপ বদলে যাবে ৷ তার জেরেই দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বৃষ্টি চলবে ৷ পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টিপাতের লাল সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী বলছে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ আপডেট।
ঘূর্ণাবর্ত গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে আজ
সাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। তা ক্রমেই শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর সেই সিস্টেমের জেরে দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আলিপুর হাওয়া অফিস বলছে, বুধবার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বলয় তৈরি হতে পারে। পরে সেটি উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে শুক্রবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। আরও শক্তি বৃদ্ধি করে সেই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার মতো অনুকূল পরিস্থিতিও সাগরে তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। যদিও ঘূর্ণিঝড় আসবেই, তেমনটা নিশ্চিত করে জানায়নি হাওয়া অফিস।
জেলায় জেলায় ভারী বৃষ্টি
হাওয়া অফিস বলছে, আগামী পাঁচ দিন কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। সঙ্গে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইবে। পাশাপাশি বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমানে কালবৈশাখীরও সতর্কতা থাকছে। সেইসঙ্গে আগামী ২৪ তারিখ অর্থাৎ শুক্রবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা থাকছে পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনায়। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রেও, আগামী ৫ দিন বৃষ্টি চলবে, সঙ্গে কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০, কোথাও ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা হওয়ার সর্তকতা থাকছে। মঙ্গলবার ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩.১ কিলোমিটার ওপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। আজ এটি নিম্নচাপ অক্ষরেখায় পরিণত হবে। তারপর উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে আগামী ২৪ তারিখ নাগাদ মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
আজ কোন কোন জেলায় বৃষ্টি?
ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা বহাল রয়েছে দক্ষিণের প্রায় সর্বত্র। দক্ষিণের জেলাগুলিতে তীব্র গতিতে ঝড়ো হাওয়া বইবার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে আর্দ্রতার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যার জেরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বজ্রঝড় এবং দমকা হাওয়ার গতি পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। বুধে কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় বজ্রপাত-সহ মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবারও দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় ঝড়বৃষ্টি জারি থাকবে। এর জেরে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরপগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও কোনও জায়গায় হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বাকি জেলাগুলিতে হাল্কা বৃষ্টির পূর্বাভাস। শনিবার দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বর্ষণ শুরু হতে পারে। আগামী শুক্রবার থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছেন আবহবিদেরা।
উতরবঙ্গের আবহাওয়া
বুধবার উত্তরবঙ্গের সবকটি জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। দমকা হাওয়ার বেগ ঘন্টায় হতে পারে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ কিমি। এর মধ্যে বুধবার জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারের কোনও কোনও জায়গায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে এবং উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহে দমকা হাওয়ার বেগ হতে পারে ঘন্টায় ৪০-৫০ কিমি। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার উত্তরবঙ্গের সবকটি জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা বৃষ্টির সম্ভাবনা। রবিবার ও সোমবার ফের বজ্রবিদ্যুৎ-সহ মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা।
কলকাতার আবহাওয়া
আগামী ২৪ ঘন্টায় কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে যথাক্রমে ৩৪ ও ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। ২২ মে কলকাতায় ঝেঁপে বৃষ্টি নামতে পারে। সঙ্গী হবে ঝড়। প্রায় সারা দিনই তিলোত্তমার আকাশ মেঘলা থাকবে।