
কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের ইউনিফাইড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন (U-DISE)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এক চমকে দেওয়া তথ্য। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের ৩,৮১২টি স্কুলে একজন ছাত্র-ছাত্রীও ভর্তি হয়নি, অথচ সেই স্কুলগুলিতেই ১৭,৯৬৫ জন শিক্ষক নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। অর্থাৎ, ক্লাসরুমে ছাত্র নেই, কিন্তু শিক্ষক রয়েছেন।
দেশজুড়ে শূন্য-ভর্তি স্কুলগুলির প্রায় অর্ধেকই বাংলায়। যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের শিক্ষানীতিকে ঘিরে। রিপোর্ট বলছে, গোটা দেশে ২০,৮১৭ জন শিক্ষক এমন স্কুলে কর্মরত যেখানে কোনও পড়ুয়া নেই। তার মধ্যে ৮৬ শতাংশই পশ্চিমবঙ্গে। একই সঙ্গে বাংলায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত ২৯, যা জাতীয় গড় ২৪-এর চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ রাজ্যে সামগ্রিকভাবে শিক্ষকের ঘাটতিও রয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলার ৬,৪৮২টি একক-শিক্ষক স্কুলে ২.৩৫ লক্ষেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। গড়ে প্রতি স্কুলে ৩৬ জনেরও বেশি ছাত্র। এই বৈপরীত্য দেখাচ্ছে, রাজ্যের কিছু এলাকায় স্কুল ফাঁকা পড়ে আছে, আবার কোথাও শিক্ষক একা হাতে অনেক ছাত্র সামলাচ্ছেন।
অন্য রাজ্যগুলির ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। যেমন, ঝাড়খণ্ডে ৯,১৭২টি একক শিক্ষক স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৩৬, বিহারে ৩০। তবে বাংলার মতো এত বিপুল সংখ্যক শূন্য-ভর্তি স্কুল অন্য কোথাও দেখা যায়নি বলেই মত অনেকের।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এক্স-এ প্রশ্ন তুলেছেন, 'এটাই কি উন্নয়নের মডেল? যেখানে স্কুল আছে, শিক্ষক আছে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী নেই! যেখানে শিক্ষা নয়, চলছে শুধু দুর্নীতির পাঠ।'
অন্যদিকে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই রিপোর্টকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তাঁর এক্স-এ লিখেছেন, 'বিজেপি চিরকাল মিথ্যা ছড়ায়। গত এক দশকে রাজ্য সরকার হাজার হাজার নতুন স্কুল গড়ে তুলেছে, পুরনো স্কুলের সংস্কার করেছে এবং শিক্ষার প্রসারে বহু প্রকল্প চালু করেছে।' তিনি আরও লেখেন, 'শুধুমাত্র গত শিক্ষাবর্ষেই সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে রাজ্য সরকার স্কলারশিপ দিয়েছে।'