বছর প্রায় শেষের পথে। আর কিছুদিন পরেই নতুন বছর ২০২৩। বছরভর বাংলার বুকে ঘটে গিয়েছে নানান ঘটনা-দুর্ঘটন। বিশেষত রাজনৈতিক দিক থেকে এই বছর হয়ে উঠেছে ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছরের সেইসব রাজনৈতিক ঘটনাবলীর মধ্যে থেকেই বাছাই করা কিছু খবর আমার নিয়ে এসেছি আপনাদের জন্য। চলুন একবার ফিরে দেখা যাক, রাজনৈতিকভাবে ২০২২ কেমন গেল পশ্চিমবঙ্গের।
পুরনিগম ভোটে জয় - বছরের প্রথম দিকেই রাজ্যে আয়োজিত হয় ৪ পুরনিগম ভোট। ভোটগ্রহণ হয় বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল ও শিলিগুড়ি পুরনিগমে। ৪টি পুরনিগমেই ওঠে সবুজ ঝড়। বিরোধীদের কার্যত উড়িয়ে দিয়ে ৪ পুরনিগনম দখল করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
পুরভোটে জয় - পুরনিগম নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে পুরভোটে। রাজ্যের ১০৮টি পুরসভা ভোটেও জয়জয়কার দেখা যায় তৃণমূলের। শুধুমাত্র নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভাটি যায় বামেদের দখলে। আর দার্জিলিং পুরসভার দখল নেয় হামরো পার্টি। পরবর্তীতে অবশ্য হামরো পার্টির মধ্যেও ভাঙন দেখা দেয়।
ভাদু শেখ খুন ও বগটুইকাণ্ড - গত ২১ মার্চ বাংলার বুকে ঘটে যায় এক ভয়াবহ হত্যালীলা। ওইদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বোমা মেরে ও গুলি করে হত্যা করা হয় বীরভূমের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের উপপ্রধান ভাদু শেখকে। সেই খুনের বদলা নিতে বগটুই গ্রামের একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজনের। ঘটনার ভয়াবহতায় শিউড়ে ওঠে গোটা দেশ। ঘটনার তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে। সম্প্রতি সেই বগটুইকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তবে সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীনই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় তাঁর।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার - শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই বছর গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকা, যা এই রাজ্যের অন্যতম বড় খবর। আর শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নয়, গ্রেফতার করা হয় তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও। এই ঘটনার জেরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শুধু মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়াই নয়, দল থেকেও বহিষ্কার করে তৃণমূল।
গ্রেফতার মানিক ভট্টাচার্য - পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে ইডি। বয়ানে অসঙ্গতি এবং জেরায় অসহযোগিতার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয় পলাশিপাড়ার বিধায়ককে।
অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার - গরু পাচার মামলায় এবছর গ্রেফতার করা তৃণমূলের আরও এক দাপুটে নেতা তথা বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। গরু পাচারের ঘটনায়, তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। পরবর্তী সময় তাঁকে গ্রেফতার করে ইডিও। তবে বর্তমান অন্য একটি মামলায় দুবরাজপুর থানায় বন্দি রয়েছেন তিনি।
অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ - কয়লা পাচারকাণ্ডে এবছর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূল সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। প্রসঙ্গত, কয়লা পাচারের ঘটনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারেবারেই নিশানা করেছে বিজেপিও।
এইমস নিয়োগ দুর্নীতি - কল্যাণী AIIMS-এর নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ায় চাকদার বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষের পুত্রবধূর। অভিযোগ, বিজেপি বিধায়কের পুত্রবধূ অনুসূয়া ঘোষ নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরি পেয়েছেন। একইভাবে নাম জড়ায় বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানার মেয়ে মৈত্রী দানারও। এই ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি।
'নতুন তৃণমূল' - কয়েক মাস আগে কলকাতার বুকে একটি পোস্টারকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। তাতে লেখা ছিল,'আগামী ৬ মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল।' যদিও পরে সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'নতুন তৃণমূল মানে মানুষ যেভাবে তৃণমূলকে দেখতে চাইছে, সেভাবেই তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠিত করব।'
শুভেন্দু অধিকারীর 'তারিখ' হুঁশিয়ারী - সম্প্রতি ডিসেম্বরের তিনটি তারিখের উল্লেখ করে রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো জল্পনার সৃষ্টি করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বার্তা দেন, 'ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ'। তাঁর উল্লেখ করা তারিখগুলি ছিল ১২, ১৪, ২১ ডিসেম্বর। যা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণণূলও।
আরও পড়ুন - এক চামচ মধুই মেদ ঝরিয়ে রোগা করে দিতে পারে, তবে খাওয়ার নিয়ম আছে, জানুন