জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জে লেপ্টোস্পাইরোসিস বা ইঁদুর জ্বরের সংক্রমণ আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। প্রথমে রাজগঞ্জের চেতনবাড়ি গ্রামে ১৫ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছিল, কিন্তু নতুন রিপোর্টে আরও ৫৮ জনের শরীরে এই রোগের জীবাণু ধরা পড়েছে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৩ জন নাবালকও রয়েছে। পাশাপাশি, দু’জনের শরীরে স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণও মিলেছে।
লেপ্টোস্পাইরোসিস মূলত জলবাহিত ব্যাক্টেরিয়া লেপ্টোস্পাইরা দ্বারা ছড়ায়, যা ইঁদুর, কুকুর, বিড়ালের মল-মূত্র থেকে আসে। বর্ষায় এসব বর্জ্য জমা জলে মিশে গেলে, ফাটা চামড়া বা কাটা অংশের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। প্রাথমিকভাবে জ্বর ও তীব্র পেশী ব্যথা দেখা দিলেও, অবহেলা করলে এই রোগ লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও মস্তিষ্ক পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
স্বাস্থ্য দফতরের ধারণা, রাজগঞ্জের একটি বিশাল পোল্ট্রি ফার্ম থেকেই এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আড়াই লাখ মুরগির এই ফার্মে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা মুরগির বিষ্ঠা ইঁদুর ও মাছির বংশবৃদ্ধি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফার্ম সংলগ্ন গ্রামে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে, যা রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারণ হতে পারে। ইতিমধ্যেই ওই ফার্ম থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই প্রথমে রোগটিকে সাধারণ ভাইরাল জ্বর ভেবে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ফলে একই পরিবারের একাধিক সদস্য সংক্রমিত হয়েছেন। গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, লোকালয়ের মধ্যে হ্যাচারি অনুমোদন দিয়ে প্রশাসন ভুল করেছে। পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কও শুরু হয়েছে, হ্যাচারি বন্ধের দাবিতে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভে নামায়, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়কও হস্তক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা মেনে চললেই এই রোগ এড়ানো সম্ভব। তাদের পরামর্শ—
জমা জল এড়িয়ে চলা ও খালি পায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকা
পশু বা পোল্ট্রির সংস্পর্শে এলে ভালোভাবে হাত-পা ধোওয়া
সম্ভাব্য দূষিত এলাকায় হাঁটার পর অবশ্যই করা
উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে হয় এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তবে আপাতত রাজগঞ্জের গ্রামগুলিতে ইঁদুর জ্বরের আতঙ্ক কাটছেই না।