ঘটনাটি কুয়েতের বাসিন্দা নাজরা ইউসুফ আলএনজির। ১৫ অগাস্ট ২০০৯ সালে মহিলা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, যার পরে এখানে সরকারকে নিজেদের আইন পর্যন্ত বদলাতে হয়েছে। আসলে কুয়েতের বাসিন্দা নাজরা একজন বিবাহিত মহিলা ছিলেন। তার স্বামীর নাম জায়েদ জাফরা। দুজনের দুটি সন্তানও ছিল। পরিবার আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মতোই ছিল। কোনও অভাব ছিল না। তাঁদের তেলের ব্যবসা ছিল এবং যা ভালো চলছিল।
বলা হচ্ছে যে নাজরা ছোটবেলা থেকেই রাগী স্বভাবের ছিলেন। তারা ছোট ছোট বিষয়ে খুব দ্রুত রাগ করতেন।কখনও কখনোও নিজের রাগ তিনি স্বামী এবং বাচ্চাদের উপরেও দেখাতেন। এটাও বলা হচ্ছে যে তিনি একটু বুদ্ধিহীন ছিলেন। কিন্তু তবুও পরিবারের সঙ্গে তার ভালই চলছিল এবং সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। নাজরা এবং বাচ্চা শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ ছিল। স্ত্রী সংসার চালাচ্ছিলেন এবং খেয়াল রাখছিলেন।
দ্বিতীয় বিয়ে করতে চেয়েছিলেন জায়েদ
সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু এরই মধ্যে ৩৬ বছর বয়সি জায়েদের মনে হতে শুরু করে যে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী চার স্ত্রী সঙ্গে বিয়ে করতে পারেন। এ কারণে তিনি ভাবেন যে আরও একটি বিয়ে করে নেওয়া যাক। এরপরে তিনি নিজের জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করেন। কিন্তু যখন এ বিষয়ে তিনি নাজের আগে জানান তখন নাজরা ক্ষেপে যান।
জায়েদ দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য অটল থাকেন
জায়েদ নাজরাকে বোঝাতে চান, ইসলাম ধর্ম অনুসারে যে কোনও পুরুষ চারটি বিয়ে করতে পারেন। যদি আমি এরকম করি তাহলে এর মধ্যে খারাপ কী আছে? কিন্তু নাজরা সোজা বলে দেন যে তুমি যদি কোন অন্য মহিলার সঙ্গে বিয়ে করো তাহলে আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না এরপরেও যায় নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং নাজরার কথা না শুনে বিয়ে করানোর দালালদের সঙ্গে কথা বলেন এবং একাধিক মেয়ে দেখেন। দ্রুত একটি মেয়ের সঙ্গে জায়দারে বিয়ে ঠিক হয়। নাজরা যখন এ বিষয়টি জানতে পারেন তখন তিনি ভেতরে ভেতরে গুমরোতে থাকেন। নাজরা এটা ঠিক করে নেয় যে, কোনও ভাবেই জায়েদকে অন্য বিয়ে করতে দেওয়া যাবে না। এরপরে জায়েদও সোজা এসে জানিয়ে দেন, ১৫ ই আগস্ট ২০০৯-এ তিনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন। ওই সময় নাজরা জায়েদকে কিছু বলেননি।
১৫ ই আগস্ট ২০০৯ এ ছিল বিয়ে
১৫ আগস্ট ২০০৯ বিয়ের দিন আসে জায়েদ বিয়ের জন্য প্রচুর খরচ করেন এবং অনুষ্ঠান সাজান। তিনি বড় বড় টেন্ট লাগান। নেদারল্যান্ড থেকে দামি ফুল আনান। জায়েদ মহিলা এবং বাচ্চাদের জন্য আলাদা টেন্ট, মদ্যপানের জন্য আলাদা টেন্ট, প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত ভাল করে সাজানো হয়। খাবারের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে সেফ ডাকা হয়। কিন্তু এখানে একটু ভুল হয়ে যায়। আয়োজন আলিশান হলেও একটি মাত্র এন্ট্রি এবং এক্সিট রাখা হয়।
নাজরা বানান খুনের প্ল্যান
বিয়ের প্রোগ্রাম শুরু হলে বাড়ি থেকে গাড়িতে পেট্রল ট্যাঙ্ক ভরে বিয়ের জায়গায় পৌঁছন নাজরা। বোরখায় নিজেকে ঢেকে বিয়ের আসরে ঢুকে এন্ট্রি গেটের সামনের দিকে পর্দাতে পেট্রোল ঢালা শুরু করেন। বাইরে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। তাতে আগুন লাগিয়ে দেন। দেখতে দেখতে টেন্টে আগুন লেগে যায়। একটিই এক্সিট-এন্ট্রি হওয়ার কারণে বহু লোক আটকে পড়েন। বলা হচ্ছে যে আগে আগুনের কারণে ট্রেনের ভেতর ৫০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর তাপমাত্রা হয়ে যায়। ডেইলি মেলের বক্তব্য অনুযায়ী শুধুমাত্র তিন মিনিটের ভিতরে বহু লোক মারা যান। ৪১ জনের অন দা স্পট মৃত্যু হয়ে যায়। বাকি ৯০ জন জখম হয়ে হাসপাতালে পৌঁছান। হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৭ তে পৌঁছায়।
নাজরা অপরাধ স্বীকার করেন
প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে অপরাধ স্বীকার করেন নাজরা। নাগরা জানান যে তিনি জায়েদকে মারতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তিনি জানতেন না যে ওই টেন্টটিতে জায়েদ নেই। তিনি ভেবেছিলেন যে জায়েদ নিজের নতুন স্ত্রীকে নিয়ে ওই টেন্টটিতেই হবেন।
২৫ জানুয়ারি ২০১৭ তে হয়েছে ফাঁসি
শেষমেষ দোষী সাব্যস্ত হন জায়রা। ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি নাজরাকে ফাঁসিতে চড়ানো হয়। জানিয়ে দেওয়া যাক এই ঘটনার পর কুয়েতে নতুন আইন তৈরি হয় যে, ফায়ার প্রুফ টেন্ট হতে হবে। যেখানে আগুন লাগানোর যন্ত্র থাকতে হবে এবং টেন্টটিতে তিনটি এক্সিট গেট থাকতেই হবে।