তালিবানদের নিশানায় কান্দাহার
আফগানিস্তানের কান্দাহারে তালিবানদের নিশানা। রয়েছে তালিবান নামের আতঙ্ক। এই মুহূর্তে শহরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তালিবানরা এবং শহরের ভেতর বসবাসকারী মানুষ ভীতসন্ত্রস্থ। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা কান্দাহারের ওই মহিলাদের, যাঁরা কুড়ি বছর আগে তালিবানের অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সেই আতঙ্ক এখনো টাটকা রয়েছে।
ব্য়বসায়ীদের আতঙ্ক
কান্দাহার বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মহিলাদের মধ্যে এই কারণে আতঙ্ক বেশি, কারণ কুড়ি বছর আগে তালিবানরা অত্যন্ত ভয়াবহ শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিল। তালিবানদের আতঙ্ক কতটা তা বুঝতে হলে কান্দাহার শহরে বোরখা ঢাকা মহিলাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে। আপাদমস্তক এখন তাঁদের একটাই চিন্তা, কুড়ি বছরে তালিবানদের মহিলাদের প্রতি চিন্তাভাবনা কতটা পরিবর্তন হয়েছে।
মহিলাদের আশঙ্কা চরমে
তালিবানরা শহরে প্রবেশ করলে কি আগের মত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে? তালিবানরা আফগানিস্তানের মহিলাদের লেখাপড়ার ওপর এবং চাকরি করার পর আবার বিধি-নিষেধ আরোপ করবে কী! তালিবানরা কি একা বেরোনো মহিলাদের ফের মারধর করবে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে কান্দাহার শহরের অলিতে-গলিতে।
পুরনো ফতোয়ার স্মরণে থরহরিকম্প
কান্দাহারের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন এটাই। কান্দাহার বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ রহমত বলেন যে আগে যদি ৫ জন মহিলা একসাথে আসত, তাহলে তাদের লাঠি দিয়ে বাড়ি মারা হতো। তাদের মেরে ভাগিয়ে দেওয়া হতো। তাঁর দাবি, কিছুদিন আগে ফেসবুক আমরা দেখেছি, যে তালিবানরা বলেছেন যে, মহিলারা একা বাজারে যাবেন না. ডাক্তারের কাছে যাবেন না। একজন মহিলার স্বামী যদি শহরের বাইরে গিয়ে থাকেন, বা কোনও কাজে বাইরে থাকেন, সে সময় বাচ্চারা যদি অসুস্থ হন বা নিজেও অসুস্থ হন, তাহলে এই মহিলা কি করবেন? এই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে মহিলারা আতঙ্কে রয়েছেন।
তবে রোষনজরে পড়ার ভয়ে মুখে কুলুপ
তবে মহিলারা এই বিষয়ে কোনও মুখ খুলতে চাইছেন না। তালিবানরা আফগান মহিলাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে, এটা জানার জন্য সারা পৃথিবীর কৌতুহল রয়েছে। আজ তাঁদের তরফ থেকে যখন কান্দাহারে বাজারে পৌঁছে দেখা গিয়েছে, মহিলাদের দেখা গিয়েছে তাঁরা সম্পূর্ণরূপে আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা। মহিলাদের তালিবানদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাঁরা কোনও রকম উত্তর দিতে চাননি। কান্দাহার এবং কাবুল আপাতত তালিবানদের দখলের বাইরে রয়েছে, তাই এই মুহূর্তে তাঁরা মহিলারা শহরের বাজারে একা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু যদি তালিবানদের ফের এলাকায় দেয় তাহলে কি হবে এই নিয়ে প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রথম ছমাস সুবোধ, পরে স্বমূর্তি !
মানুষের মধ্যে ভয়, প্রথম ছয় মাস তালিবানরা খুব ভালো আচরণ করে। তারপর ধীরে ধীরে নিজেদের পুরনো এজেন্ডায় ফিরে যায়। এর আগে তাঁরা যে ধরনের অভিজ্ঞতা তালিবানদের শাসনে ভোগ করেছেন, তাতে তাঁদের এই ভয় অমূলক নয়। বেশ কিছু শহরে বিশেষ করে দক্ষিণ আফগানিস্তানের তালিবানরা নিজেদের ক্ষমতা দখল করেছে ধীরে ধীরে। তাঁরা যে গোটা আফগানিস্তানেই তাঁদের কব্জা করবে না, তাঁর কোনও নিশ্চয়তা নেই।
তালিবানদের অভয়
যদিও তালিবানদের মুখপাত্র মওলানা ইউসুফ আহমদি আজতকের সঙ্গে কথা বার্তায় বলেছেন, কারও কোনও ভয়ের প্রয়োজন নেই। আমাদের শাসনে সবাই সুরক্ষিত থাকবে। আমরা মহিলাদের অধিকার দেব, তালিবানদের নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা মহিলাদের ওপর বিধি নিষেধ সম্বন্ধীয় কোনও রকম পোস্টার লাগাইনি। আমরা কারও সঙ্গে অন্যায় করব না। তালিবানের মুখ থেকে ন্যায় এবং সচেতনতার কথা অত্যন্ত অদ্ভুত বলে অনেকের ধারণা।
ছেলেভুলানো দাবি ধারণা স্থানীয়দের
স্থানীয়রা তালিবানদের এই দাবি ছেলেভুলানো বলে মনে করছেন এক ব্যবসায়ী। তিনি জানিয়েছেন এখানে প্রচুর আতঙ্ক রয়েছে। যার ফলে ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে। অনেকেই ধীরে ধীরে বাইরে বেরোনো কমিয়ে দিয়েছেন। খুব জরুরি না হলে বাইরে বের হচ্ছেন না। তিনি বলেন, তালিবানদের প্রথমে ব্যবহার খুব ভালো থাকে। তারপর ক্ষমতা বিস্তার করার পর তারা নিজেদের আসল স্বরূপ প্রকাশ করে। ছমাস-এক বছর পরেই তাঁদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সামনে চলে আসবে। মহিলা থেকে পুরুষ, সবার ওপরে অত্যাচার করবে। আমরা এর আগেও তালিবানদের অত্যাচার এবং শাসন পদ্ধতি দেখেছি তাই তাদের কোন কথায় আমরা ভুলছি না।
প্রগতিশীল মহিলারাই লক্ষ্য তালিবানিদের ?
কুড়ি বছর আগে তালিবান শাসনে মহিলাদের প্রতি অত্যাচার এবং জুলুম করা হয়েছিল, তার প্রচুর ভিডিও এখনও রয়েছে। যার মধ্যে অনেক মহিলাদের প্রকাশ্যে গুলি করে মেরে দেওয়া হয়। ফের নতুন করে এই আতঙ্ক সামনে এসেছে। কারণ গত কুড়ি বছরে তালিবান শাসনের অবলুপ্তির পর মহিলারা অনেক উন্নতি করেছেন এবং তাঁরা পুরুষদের সঙ্গে অনেক জায়গায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চাকরি-বাকরি ব্যবসা শুরু করেছে। যা তালিবানদের পদ্ধতির বিরোধী। ফলে আতঙ্ক রয়েছেই।