সেপ্টেম্বর মাস পড়ে গেলেও গরম কমছে না পশ্চিমবঙ্গে। বাতাসে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বজায় রয়েছে। ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল রাজ্যের মানুষ। অগাস্ট মাসজুড়েও একই অবস্থা ছিল। আর তা শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা বিশ্বজুড়েই অগাস্ট ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের তৃতীয় উষ্ণতম মাস। এই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস। সেখানে প্রকাশ, ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের তুলনায় গত অগাস্টে ১.২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা দাবি, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু দ্রুত বদলাচ্ছে।
২০২৫ সালের অগাস্টের তাপমাত্রা: ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০২৫ সালের অগাস্টে গোটা বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ১৯৯১-২০২০ সালের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ০.৪৯ ডিগ্রি বেশি। এটি ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের পর তৃতীয় উষ্ণতম অগাস্ট।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অগাস্ট পর্যন্ত ১২ মাসের গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। যা প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি সীমা অতিক্রম করেছে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ মানুষের সৃষ্টি গ্রিনহাউস গ্যাস।
C3S প্রধান সামান্থা বার্গেস জানিয়েছেন, এই তাপমাত্রা থেকে বোঝা যায় বিশ্বে দূষণ বাড়ছে। ২০২৫ সালের জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত গ্রীষ্ম ছিল বিশ্বের তৃতীয় উষ্ণতম মাস।
ইউরোপে লু ও উষ্ণতা বৃদ্ধি
দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে ভয়াবহ লু প্রবাহিত হয়েছিল এবার। যার জেরে স্পেন এবং পর্তুগালে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ দিনের তাপপ্রবাহের কারণে স্পেনে ১১০০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়। তখন ইউরোপে গড় তাপমাত্রা ছিল ১৯.৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গড়ের চেয়ে ০.৩০ ডিগ্রি বেশি। এর ফলে পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ এবং তুরস্ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে উত্তর ইউরোপের তাপমাত্রা তুলনামূলক ঠান্ডা ছিল।
সমুদ্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধি
এবছর সমুদ্রের তাপমাত্রাও বেড়েছিল তাৎপর্যপূর্ণভাবে। বিশ্বব্যাপী সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ছিল ২০.৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরও অস্বাভাবিকভাবে উষ্ণ ছিল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সমুদ্রের এই উষ্ণতা বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করেছে। আবহাওয়ার এই বিপর্যয়ের কারণে ইউরোপের পশ্চিম এবং দক্ষিণে খরা দেখা দেয়। আবার ইতালি, পূর্ব স্পেন এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই চিত্র দেখা যায় চিন, জাপান, পাকিস্তান, ভারত এবং ব্রাজিলে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী বছরগুলিতে আরও গরম বাড়বে।