প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে উঠল শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ। গত বছরের ৫ অগাস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জনরোষের মুখে পড়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসেন হাসিনা। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরে হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরাল হয়। ইউনূস নিজেও হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে বিচারের সামনে দাঁড় করানোর কথা বলেছেন।
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে (6th BIMSTEC Summit 2025) যোগ দিতে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে রয়েছেন মোদী। সেই সম্মেলনের ফাঁকে শুক্রবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দুই নেতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপরে হামলার ঘটনার প্রসঙ্গও।
মোদী-ইউনূস বৈঠকের পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সাংবাদিক বৈঠক করে। সেখানে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনাকে ঢাকায় প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে কোনও আনুষ্ঠানিক অনুরোধ বাংলাদেশ করেছে কি না? জবাবে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বলেছেন, 'শেখ হাসিনার ব্যাপারে বাংলাদেশ একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছে। এ বিষয়ে এখনই বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।'
মিস্রি জানিয়েছেন যে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে দু'জনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মোদী এই বিষয়টি সরাসরি উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। তিনি এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ সরকার তদন্ত করবে এবং তার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করবে। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি আবারও ভারতের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ভারতের আকাঙ্ক্ষার উপর জোর দিতে বলেছেন। মোদী জানিয়েছেন যে পরিবেশকে নষ্ট করে এমন যে কোনও বক্তব্য এড়িয়ে চলাই ভাল।
সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ নিয়েও ইউনূসকে কড়া বার্তা দিয়েছেন মোদী। জানিয়ে দিয়েছেন যে সীমান্তে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। এছাড়াও বেআইনি ভাবে সীমান্ত অতিক্রম বন্ধ করাও প্রয়োজন।
সম্প্রতি, চিন সফরে গিয়েছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁক কয়েকটি মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্য়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইউনূস চিনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন যে ঢাকা এই অঞ্চলের সমুদ্রের একমাত্র রক্ষক। চিনকে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সময় ইউনূস ভারতের বাধ্যবাধকতাগুলি উল্লেখ করেছিলেন এবং চিনকে প্রলুব্ধ করার সময় বলেছিলেন যে বাংলাদেশে তাদের বিশাল ব্যবসায়িক সুযোগ রয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির কথাও উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি, যাদের সেভেন সিস্টার্স বলা হয়, চারদিকে স্থলবেষ্টিত দেশ, তারা ভারতের স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। এই সমগ্র অঞ্চলে সমুদ্রের একমাত্র রক্ষক বাংলাদেশ।