গত ৯ মে রাতে ঢাকা জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। শত শত মানুষ জড়ো হন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের বাসভবন ‘স্টেট গেস্ট হাউজ যমুনা’র সামনে। তাদের মূল দাবি ছিল আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার।
এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-র দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখার প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি রাত ১০টা থেকে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করার ঘোষণা দেন ফেসবুকে। বিক্ষোভে তিনি ঘোষণা করেন, যতক্ষণ না আওয়ামী লিগকে বিচারের মুখোমুখি করা ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার স্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া হচ্ছে, এই অবস্থান চলবে।
রাতেই ফেসবুকে সমর্থকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি লেখেন, ‘আওয়ামী লিগ নিয়ে সিদ্ধান্ত আজ রাতেই হবে।’
শনিবারেই ব্যান আওয়ামী লিগ
এরপর শনিবার, ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে, আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। জানানো হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে বিবৃতি জারি করা হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লিগ ও তার নেতাদের বিচার সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
জুলাই ২০২৪-এর ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার দিকটিও নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে সেই সময়ে বড় পরিসরে সরকারবিরোধী প্রতিবাদে রূপ নিয়েছিল আন্দোলন। শেখ হাসিনার সরকার সেই বিক্ষোভ দমন করলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। এরপর থেকেই ৭৭ বছরের হাসিনা ঢাকা ছেড়ে ভারতে চলে যান।
ওই বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ রাখা হবে।
শুধু দুর্নীতির মামলাই নয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ, গুম-হত্যার মতো একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই নিয়ে মামলাও দাখিল করা হয়েছে।
গত মাসে বাংলাদেশের একটি আদালত শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এবং আরও ৫০ জনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধভাবে জমি অধিগ্রহণের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন এনসিপি দলের তরফেও শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। তারা আরও দাবি করেছে, আওয়ামী লিগ যেন জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়।
এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লিগ ১০ মে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে। বিবৃতিতে দলটি বলেছে—
‘অবৈধ ইউনুস সরকার আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করেছে— আমরা তীব্র নিন্দা জানাই’
বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ বলেছে, ইউনুস সরকার একটি অগণতান্ত্রিক ও স্বঘোষিত ফ্যাসিস্ট সরকার। তারা অবৈধভাবে দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করেছে। এই সিদ্ধান্তে দেশবাসী বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। গত ৭৫ বছরে আওয়ামী লিগ ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ১৯৭০-এর নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই দলকে নিষিদ্ধ করা মানে দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত।
আওয়ামী লিগ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশকে অগণতান্ত্রিক পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গি শক্তির উত্থানের পথ সুগম হবে।
আন্তর্জাতিক মহলের কাছে দলটি আহ্বান জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে, বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে এবং দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতে।
তারা বলছে, আওয়ামী লিগ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অটল থাকবে। জনগণের অধিকারের পক্ষে লড়াই জারি থাকবে। জনগণই শেষ কথা বলবে।