প্রাণনাশ হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন আয়াতোল্লা আলি খামেনেই? ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যুদ্ধের আবহে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করে ফেললেন। খামেনেই ৩ জন শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুর নাম প্রস্তাব করেছেন, যারা তাঁর মৃত্যুর পরে উত্তরসূরি হিসেবে নেতৃত্বে আসতে পারেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেই তালিকায় নাম নেই তাঁর নিজের ছেলেরই।
সূত্রের খবর, ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মাঝে হুঙ্কার দিলেও ঠিক যেন মেঘনাদ হয়ে আড়ালে রয়েছেন আয়াতোল্লা খামেনেই। এই মুহূর্তে তিনি নাকি আশ্রয় নিয়েছেন বাঙ্কারে। তাঁকে যাতে কেউ তাঁর অবস্থান সম্পর্কে বিন্দুমাত্র টের না পায় তাই চারপাশের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত তাঁর 'জরুরি যুদ্ধ পরিকল্পনার' অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, খামেনেইয়ের ছেলে মুজতবা খামেনেই নিজেও একজন ধর্মগুরু। তিনি ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডসের ঘনিষ্ঠ। দীর্ঘদিন ধরেই আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইয়ের উত্তরসূরি হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছিল তাঁর নাম। কিন্তু বাবা তাঁর উপর ইরানের কতৃত্ব সঁপে দেওয়ার ভরসা করতে পারলেন না।
এদিকে, ইরানের প্রাক্তন রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন। তবে ২০২৪ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিজের ছেলের উপর আস্থা না থাকলে কি ইব্রাহিম রাইসির বংশধরকেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে দেখতে চান আয়াতোল্লা? যদিও হিসেবে খামেনেই কোন তিন জনের নাম প্রস্তাব করেছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
১৩ জুন ইজরায়েল প্রথম ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালায় ইরান। তারপর থেকেই শুরু হয় ক্ষেপণাস্ত্রের লড়াই। পাল্টা জবাব দেয় ইরান। পশ্চিম এশিয়ায় এই সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে ইরানের একাধিক সামরিক কর্তা নিহত হয়েছেন। তাঁদের পরিবর্তও ইতিমধ্যে বেছে নিয়েছেন খামেনেই। এ বার নিজের উত্তরসূরিও ঠিক করে ফেললেন তিনি। সূত্রের খবর, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খামেনেই নিহত হলে ওই তিন জনের মধ্যে থেকেই কাউকে ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসাবে বেছে নেওয়া হতে পারে। অনেকের মতে, খামেনেইয়ের তিন দশকের শাসনকালে এমন অনিশ্চয়তা আগে কখনও তৈরি হয়নি। তবে কি যে কোনও মুহূর্তে ইজরায়েলি হামলায় খুন হতে পারেন খামেনেই?
সূত্রের দাবি, খামেনেই ধরেই নিয়েছেন ইজরায়েল বা আমেরিকা— কোনও একটি রাষ্ট্র তাঁকে হত্যার চেষ্টা করবে। এমনটা হলে, তা একপ্রকার সম্মানের সঙ্গে মৃত্যু বলেই দেখাতে চাইছেন তিনি।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ধর্মীয় সংগঠন ‘অ্যাসেম্বলি অফ এক্সপার্টস’। তাদেরও ইতিমধ্যেই বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
খামেনেই নাম প্রকাশ না করলেও তাঁর ডান হাত আলিরেজা আরাফির নাম ঘিরে গুঞ্জন রয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েকশিয়ানের সরকারকে পরামর্শ দানকারী বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি। চর্চায় রয়েছে আলি আসগর হেজাজির নামও। আয়াতোল্লার দফতরে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সমস্ত পদক্ষেপ পর্যালোচনার দায়িত্ব হেজাজির কাঁধে। মহম্মদ গোলপায়েগানির নাম ঘিরেও গুঞ্জন রয়েছে। খামেনেইয়ের দফতরের ‘চিফ অফ স্টাফ’ হিসেবে ইরান সরকারের যাবতীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ পর্যালোচনা করেন তিনি।