বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক। প্রয়াত প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লিগ নেতা নুরুল মাজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এক ছবিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে তোলপাড়। ভাইরাল ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের বেডে অসুস্থ হুমায়ুনের হাতে একটি হাতকড়া পরানো রয়েছে। সেই ছবিকে কেন্দ্র করেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
৭৫ বছর বয়সি এই প্রাক্তন মন্ত্রীকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাঁকে জেল হেফাজতে রাখা হয়েছিল। বারবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শেষমেশ ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। হুমায়ুন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন।
ভাইরাল ছবিকে কেন্দ্র করে সরব হয়েছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, 'মৃত বা মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির হাতে হাতকড়ি পরানো অমানবিক। এটি মর্যাদাহানির চরম উদাহরণ।'
আইনজীবী আবু ওবায়দুর রহমানের মতে, এটি উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করার সামিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, '৭৫ বছর বয়সি অসুস্থ মানুষকে কীভাবে বিপজ্জনক বা পলাতক হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ বন্দি হিসেবে ধরা যায়?' অন্যদিকে, মানবাধিকার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ তুলে ধরে বলেন, এটি আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
যদিও কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ভাইরাল ছবি বিভ্রান্তিকর। তাঁদের বক্তব্য, এটি আইসিইউ তে চিকিৎসাধীন অবস্থার ছবি নয়। ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও জানিয়েছে, ওই ছবি হুমায়ুনকে প্রথমবার হাসপাতালে আনার সময়ের। আইসিইউ চলাকালীন নয়।
কেরানীগঞ্জ সেন্ট্রাল জেলের জেল সুপার সুরাইয়া আখতার জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক সময় বন্দিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতকড়ি পরানো হয়। সম্ভবত সেসময়কারই ছবি এখন ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও ছবিকে ভুয়ো বলে দাবি করেছে। স্বরাষ্ট্রসচিব মহম্মদ নসিমুল গনি বলেন, 'এটি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের অংশ। প্রয়াত মন্ত্রীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।' তবে বিতর্ক থামেনি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্তের দাবি উঠতে শুরু করেছে।