পলাতক হীরা ব্যবসায়ী মেহুল চোকসিকে ভারতে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিল বেলজিয়ামের কোর্ট। শুধু তাই নয়, এই বছরের শুরুতে তার গ্রেফতারি যে বৈধ ছিল, সেই নির্দেশও দিয়েছে কোর্ট। অর্থাৎ সমস্ত দিক থেকে এখন ফেঁসে গিয়েছেন মেহুল চোকসি। এখন তার ভারতে ফেরা শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
প্রসঙ্গত, চোকসির উপর ১৩ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB) জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত চোকসি। এটি দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং কেলেঙ্কারিগুলির মধ্যে একটি। ২০১৮ সালের শুরুতে চোকসি ভারত থেকে পালিয়ে যান।
এখনই ফেরানো সম্ভব নয়
এই রায়ের পর অবশ্যই হিরে ব্যবসায়িকে ফেরানোর কাজ কিছুটা এগিয়েছে। যদিও এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি।
আসলে আদালত জানিয়েছে, চোকসি এখনও উচ্চ আদালতে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন। আর এই সিদ্ধান্তের অর্থ হল তাকে চট করে ভারতে ফিরিয়ে আনা যাবে না।
কিন্তু তার পরও এই রায়কে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এই রায়ের মাধ্যমে আদতে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও এগিয়ে গেল। আজ না হয় কাল, তাকে ভারতে ফিরিয়ে আনা যাবেই বলেই আশাবাদী তারা।
চলতি বছরে গ্রেফতার করা হয়
২০২৫ সালের ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয় মেহুল চোকসিকে। ভারতীয় প্রশাসনের লিখিত অনুরোধেই এমনটা করে সেই দেশের পুলিশ। তার পর থেকে চোকসি জেলেই আছেন। তার একাধিক জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যায়।
কী বলা হয় শুনানিতে?
এই শুনানিতে অংশগ্রহণ করে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী বেলজিয়ান প্রসিকিউশন এবং চোকসির আইনি দল। তারা নিজেদের মতো করে আদালতের সামনে যুক্তি তুলে ধরে।
তবে আদালত দেখেছে যে চোকসি ভারতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, প্রমাণ নষ্ট করা এবং দুর্নীতি সহ একাধিক অপরাধের জন্য অভিযুক্ত। আর সেগুলি বেলজিয়ামের আইন অনুসারেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এটাই মেহুলের বিপক্ষে গিয়েছে। আদালত মনে করে, আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে প্রত্যর্পণের জন্য প্রয়োজনীয় 'দ্বৈত অপরাধের' শর্ত পূরণ করে। আর সেই কারণেই তার বিরুদ্ধে চলে যায় রায়।
এছাড়া বেলজিয়ামের আদালত জানিয়েছে, চোকসি আবার পালিয়ে যেতে পারে। তাই তার গ্রেফতারের বৈধতা বহাল রাখা হচ্ছে।
ভারতে কোন কোন বিধিতে মামলা হয়েছে?
আমাদের দেশে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত হয়েছে চোকসি। সেগুলি হল — ১২০বি (ফৌজদারি ষড়যন্ত্র), ২০১ (প্রমাণ হারিয়ে ফেলা বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া), ৪০৯ (ফৌজদারি বিশ্বাস লঙ্ঘন), ৪২০ (প্রতারণা), এবং ৪৭৭এ (নথিপত্র জাল করা — এবং ধারা ৭ এবং ৩ (বিচার) ধারার অধীনে। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন।
ভারত আস্বস্ত করেছে বেলজিয়ামকে
বেলজিয়াম সরকার প্রথম থেকেই চোকসির বিষয়টির দিকে নজর রেখেছে। সেই কারণে ভারত বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেছে যে চোকসিকে হস্তান্তর করা হলে তার বিরুদ্ধে মানবিক আচরণই করা হবে।
শুধু তাই নয়, ভারতে আনার পর তাকে মুম্বাইয়ের আর্থার রোড জেলের ১২ ব্যারাকে রাখা হবে বলেও জানান হয়েছে। এখানে ইউরোপীয় মানবাধিকারের সমস্ত মান মেনে চলা হবে। এই সেলে বিশুদ্ধ জল, খাবার, সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং চিকিৎসা মিলবে। এমনকী তাকে নির্জন কারাগারেও রাখা হবে না।