চেরনোবিল বিপর্যয়। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। ১৯৮৬ সালে উত্তর ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক প্ল্যান্টে দুর্ঘটনা হয়। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়। তারপর থেকে সেই এলাকায় মানুষ বসবাস করতে পারে না। অথচ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা চেরনোবিল এক্সক্লুশন জোনে বসবাসকারী ১১৬টি কুকুরের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তদন্তে দুই ধরনের কুকুরের প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। তাদের জিনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, সেই কুকুরগুলো দীর্ঘকাল বিষাক্ত পরিবেশে থাকার ফলে তারা সেখানে মানিয়ে নিয়েছে। মানুষও এই এলাকায় থাকতে পারে না। অন্য কোনও সাধারণ কুকুরকে এই এলাকায় রাখলে মৃত্যুও হতে পারে। তবে ওই এলাকার কুকুরগুলো কার্যত 'সুপারডগ' হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কুকুরগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা যুক্ত এলাকায় থাকতে পারছে। যা সাধারণত সম্ভব নয়।
কিন্তু ওই এলাকাতে কুকুরগুলো কীভাবে বেঁচে আছে সেটাই অবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। একটি এলাকা থেকে যে পরিমাণ তাপ বিকিরণ করলে মানুষ থাকতে পারে তার থেকেও ৬ গুণ বেশি তাপ বিকিরণ হয়ে থাকে সেই চেরনোবিলে। তারপরও বহাল তবিয়তে সেখানে রয়েছে কুকুররা। প্রায় ৯০০ কুকুর এই পরিবেশে বসবাস করছে। গবেষকরা দাবি করছেন, তেজস্ক্রিয় বিকিরণের পর যে সব কুকুরটা ওই এলাকা থেকে বেরোতে পারেনি, তাদেরই বংশধর এই ৯০০ কুকুর।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী নরম্যান জে. ক্লেইম্যান এবং তাঁর দল ২০১৮-২০১৯ এর মধ্যে এই কুকুরগুলির থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। নমুনা নেওয়ার পর সেগুলো আমেরিকায় পাঠানো হয়। যার ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, এই কুকুরগুলির ৪০০টির জেনেটিক অবস্থান স্বাভাবিকের থেকে আলাদা। এই জিনগুলি তাদের বিষাক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা দেয়। ৫২টি নতুন জিনেরও সন্ধানও পান গবেষকরা। তবে শুধু কুকুর নয়, এই এলাকায় বসবাসকারী নেকড়ে এবং ব্যাঙেরও বেশি তাপমাত্রা যুক্ত এলাকায় থাকার অভ্যাস তৈরি হয়ে গেছে। ব্যাঙের ত্বকের রঙের পরিবর্তনও হয়েছে। সবুজ রঙ থেকে গাঢ় কালো চামড়ার ব্যাঙে পরিবর্তিত হয়েছে সেগুলো।
এর পরিণাম কী? বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, কুকুরদের ওই এলাকায় থাকার ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, আগামী দিনে মানুষও সেখানে বসবাস করতে পারবে।