চেরনোবিলে আশঙ্কাজনক ঘটনা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষ রক্ষারক জন্য তৈরি কাঠামোর উপর আছড়ে পড়ল ড্রোন। বিস্ফোরণের পর রীতিমতো আগুন ধরে যায়। ১৯৮৬ সালের পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর এই সুরক্ষা কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনাটি ঘটে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলার বিষয়টি কনফার্ম করেছেন। তিনি জানান, ড্রোনে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ছিল। আর সেটা দিয়েই হামলা চালানো হয়।
তিনি এই হামলাকে 'সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ' বলে উল্লেখ করেছেন। পারমাণবিক কেন্দ্রের উপর হামলার ফলে গোটা বিশ্ব প্রভাবিত, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঘটনার পর পরই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আর সেই কারণেই দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, সুরক্ষা কাঠামোতে বেশ বড়সড় ক্ষতি হয়েছে।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে বিস্ফোরণের মুহূর্তটি ধরা পড়েছে।
তবে এরই মধ্যে আশ্বাসের বিষয় একটিই। IAEA জানিয়েছে, NSC-এর ভিতরের স্তরে পর্যন্ত বিস্ফোরণের অভিঘাত পৌঁছায়নি। ভিতরের স্তরে কোনও ফাটলের চিহ্ন নেই। চেরনোবিলের ভিতরে ও বাইরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়েই রয়েছে। ফলে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই সুরক্ষা স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে কী হত, তাই ভেবেই শিউড়ে উঠছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই হামলার ফলে ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
IAEA-এর ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল গ্রোসি বলেন, 'আমরা গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।'
তিনি আরও বলেন, 'চেরনোবিলের এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এখানে এবং জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে আরও সামরিক সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। চেরনোবিল কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য IAEA-এর একটি দল সেখানে রয়েছে।'
চেরনোবিলের ভয়ঙ্কর ইতিহাস
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল। চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিঅ্যাক্টর ৪ বিস্ফোরিত হয়। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয় বলা হয়। দ্রুত গোটা শহর থেকে সমস্ত বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর থেকে আজও এই চেরনোবিল তেজস্ক্রিয়তার কারণে মানুষের বসবাসের অযোগ্য়।
তেজস্ক্রিয়তা ঠেকাতে প্রথমে এই চেরনোবিলের ক্ষতিগ্রস্ত রিঅ্যাক্টরের উপর দিয়ে একটি কংক্রিট ও স্টিলের ‘সারকোফাগাস’ তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটি নষ্ট হতে শুরু করে। এরপর ২০১৬ সালে তেজস্ক্রিয়তা রুখতে বিশাল আকারের স্টিলের আচ্ছাদন (NSC) তৈরি করা হয়। সেই আচ্ছাদনেই এদিন হামলা চালানো হয়েছে।