তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের খোলনলচে পাল্টে ফেলা দরকার, এমনটাই মনে করেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তিব্বতে সফর করেছেন, যা বেজিংয়ের জন্য রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। চিনের শাসনাধীন তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী লাসায় প্রায় ২০,০০০ মানুষের সমাবেশে বক্তব্য পেশ করেন তিনি।
রাজনৈতিক বার্তা
সেখানে শি জিনপিং বলেন, 'তিব্বতকে শাসন, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতিগত ঐক্য এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি।' তিনি ইঙ্গিত দেন, তিব্বতি বৌদ্ধধর্মকে সমাজতান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। তবে তিনি নির্বাসিত আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার নাম উল্লেখ করেননি।
দালাই লামার উত্তরসূরি বিতর্কের প্রেক্ষাপট
এই সফরটি হয়েছে মাত্র দুই মাস আগে দালাই লামার মন্তব্যের পর, যেখানে তিনি স্পষ্ট করেছিলেন যে তাঁর উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার ক্ষমতা চিনের নয়, বরং তাঁর কার্যালয়ের। বেজিং অবশ্য দাবি করে আসছে যে এই প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই থাকবে।
লন্ডনের পণ্ডিত রবার্ট বার্নেট বলেন, 'দালাই লামার উত্তরাধিকার প্রশ্নটি প্রতীকী যুদ্ধক্ষেত্র। বেজিং এখানে তাদের শাসন বৈধতা দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে।'
উন্নয়ন প্রকল্প ও অবকাঠামো
শি’র সফরের সময় তিব্বতে দুটি বড় প্রকল্প বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। মোতুও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র – বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ হিসেবে বিবেচিত এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে থ্রি জর্জেস বাঁধকেও ছাড়িয়ে যাবে। এটি ব্রহ্মপুত্র (ইয়ারলুং সাংপো) নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
তিব্বত-জিনজিয়াং রেলপথ –আকসাই চিন ও ভারত সীমান্তের কাছাকাছি নতুন রেললাইন নির্মণের ঘোষণা দিয়েছে চিন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কৌশলগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানবাধিকার প্রশ্ন
যদিও বেজিং দাবি করে যে, তাদের শাসনে তিব্বতের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলি অভিযোগ করেছে যে তিব্বতিরা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিব্বতি নির্বাসিত নেতা দর্জি সেটেন বলেছেন, 'চিনের কাছে এই বার্ষিকী উদযাপনের উপলক্ষ হলেও, তিব্বতিদের কাছে এটি দখলদারিত্বের বেদনাদায়ক স্মারক।'