সিরিয়ায় আবারও ব্যাপক হিংসার খবর মিলেছে। গত দুদিনে হিংসায় নিহতের সংখ্যা হাজারের বেশি ছাড়িয়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সিরিয়ায় শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রচেষ্টা চলছে, কিন্তু বাশার আল-আসাদপন্থী বাহিনীর প্রত্যাঘাতে দেশটি আবারও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
হিংসার সূত্রপাত
গত ডিসেম্বর মাসে দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের পর রাজধানী দামাস্কাস দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS) এবং জইশ আল-ইজ্জার যৌথবাহিনী। তারা একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করলেও এখনও সাধারণ নির্বাচন হয়নি। আসাদ রাশিয়ায় নির্বাসিত হলেও তাঁর অনুগামীরা সিরিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে।
‘প্রতিশোধ-হত্যা’র বলি সাধারণ নাগরিক
ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত দুই দিনে ৭৪৫ জন সাধারণ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশকেই খুব কাছ থেকে গুলি করে বা সরাসরি আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, আসাদপন্থী বাহিনী বিদ্রোহী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ঘরে ঘরে হামলা চালাচ্ছে। পাশাপাশি, অন্তর্বর্তী সরকারের ১২৫ জন নিরাপত্তা আধিকারিক নিহত হয়েছেন, এবং সরকারপক্ষের পাল্টা হামলায় আসাদপন্থী ১৪৮ জন যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
দেশজুড়ে আতঙ্ক, অবরুদ্ধ জনজীবন
হিংসার ফলে সিরিয়ার লাটাকিয়া প্রদেশের বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাস্তায় বন্দুকধারীরা টহল দিচ্ছে, যেকোনো ব্যক্তিকে থামিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে এবং সন্দেহ হলেই হত্যা করা হচ্ছে। সড়কের পাশে মৃতদেহের স্তূপ পড়ে থাকার খবরও মিলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সিরিয়ার সরকারের অবস্থান
ফ্রান্স সিরিয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে। তবে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করছে যে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং আসাদপন্থীদের দখল থেকে বহু এলাকা মুক্ত করা হয়েছে।
বিদ্রোহী সরকারের ভবিষ্যৎ
বিদ্রোহী নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি সিরিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বিদ্রোহী নেতা মহম্মদ আল-বশির। পরে জানুয়ারি মাসে বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ঘোষণা করা হয়েছিল যে চার বছরের মধ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু সাম্প্রতিক হিংসার ফলে দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।