ডোনাল্ড ট্রাম্প সবেমাত্র আমেরিকায় ক্ষমতায় এসেছেন এবং এর মধ্যেই তাঁর একটি সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে চরম সমস্যায় ফেলেছে। আসলে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডে্ট পদে বসতেই বাইডেনের সময়ের শরণার্থী কর্মসূচি বাতিল করেছেন। এই কর্মসূচির অধীনে পাকিস্তানে আটকে পড়া আফগান শরণার্থীদের আমেরিকায় বসতি স্থাপনের কথা ছিল। বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানকে বলেছিল যে আমেরিকা অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্ত শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে, কিন্তু সেটা হয়নি। এই সমস্ত উদ্বাস্তু আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন যখন তালিবান ক্ষমতা দখল করেছিল। আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের বেশিরভাগই মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন। সে সময় পাকিস্তান সরকারকে এই শরণার্থীদের কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় দিতে বলেছিল আমেরিকা। পরে তাদের আমেরিকায় নিয়ে আসা হবে। পাকিস্তান আশা করেছিল কয়েক মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, কিন্তু তা হয়নি। পাকিস্তান এই ২৫ হাজার আফগান শরণার্থীকে আমেরিকায় পাঠানোর অপেক্ষায় ছিল। কিন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই সবকিছু উল্টে দিয়েছেন। এখন পাকিস্তান যদি এই বিষয়ে আরও কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ট্রাম্পের মেয়াদ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ত হতে পারে।
মার্কিন সরকারের একজন কর্তা সোমবার বলেছেন যে প্রায় ১৬০০ আফগান শরণার্থী রয়েছেন, যাদের জন্য আমেরিকা বসতি স্থাপনের সবুজ সংকেত দিয়েছে। বর্তমানে মার্কিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত অনেক আফগানের পরিবারও এদের মধ্যে রয়েছে। তবে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর তাঁদের বিমানের টিকিট বাতিল করতে হয়েছে। এই আফগানরা আতঙ্কে রয়েছেন তালিবানের। কারণ তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন-সমর্থিত আফগান সরকারের হয়ে কাজ করেছিলেন। এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বা আমেরিকাও কিছু জানায়নি। তবে সূত্রের বিশ্বাস, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের একজন কর্তা স্থানীয় দ্য ট্রিবিউন পত্রিকাকে বলেছেন, আমরা জানতাম যে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলে এটা ঘটতে পারে, কিন্তু মার্কিন সরকার যেভাবে এটা করেছে তা আমাদের অবাক করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার একদিন আগে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকে এই আফগান শরণার্থীদের নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র বলছে, পাকিস্তান ক্রমাগত অনুরোধ করে আসছিল যে আমেরিকা যেন এই শরণার্থীদের দ্রুত নিয়ে যায়। ২০২৩ সালে যখন পাকিস্তান অবৈধ আফগান অভিবাসীদের বের করা শুরু করেছিল, আমেরিকা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিল এবং বলেছিল যে পাকিস্তান সরকারের উচিত সেই সমস্ত লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারেন। পাকিস্তান তখন আমেরিকার অনুরোধ মেনে নিলেও সেখান থেকে উদ্বাস্তুদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বলেছিল। এখন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনও এই বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলেনি। তবে, পাকিস্তান তার অবস্থানে স্পষ্ট যে তারা এই আফগানদের আজীবন রাখবে না। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসনকে যেভাবে দেখেন, তাতে মনে হচ্ছে, এতে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে।