শক্তিশালী ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড তুরস্ক ও সিরিয়া এখন মৃত্যুদ্বীপ। একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে মরদেহ। তবুও আশায় বুক বেঁধে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে স্বজনের খোঁজ করছেন অনেকে। গত দুই দিন ধরে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক-সিরিয়ার চিত্রটা প্রায় একই রকম। যা ছবিতে তুলে আনছেন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের চিত্র সাংবাদিকরা। এরমধ্যে সামনে এল এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের ছবি। যা এক অসহায় কিশোরীর আর্তনাদ! যেন প্রকৃতির কাছে মানুষের বারবার আসহায়ত্বের চিত্র।
সোমবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সর্বত্র শুধু ধ্বংসলীলার চিহ্ন। ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এসবের মাঝে এমন কিছু ছবিও বেরিয়ে আসছে, যা কোনো অলৌকিক ঘটনা থেকে কম নয়। উত্তর সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ৩৬ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই ভাইবোনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
আমেরিকান নিউজ ওয়েবসাইট সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসনায়া-বাসানেহ সিরিয়ার হারাম শহরের কাছে একটি ছোট গ্রাম। এখানেও ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকারী দল যখন এখানে পৌঁছায়, তাঁরা একটি মেয়ে ও তার ভাইকে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যান। মেয়েটি তখনও জীবিত ছিল। মেয়েটি এক উদ্ধারকারীকে বলে, 'আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তুমি যা বলবে আমি তাই করব, আমি সারাজীবন তোমার দাস হয়ে থাকব।'
আরও পড়ুন-খোঁজ মিলল আতসুর, তুরস্কে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তারকা ফুটবলার
এরপর উদ্ধারকারী দল ওই কিশোরী ও তাঁর ভাইকে উদ্ধার করে। মেয়েটির নাম মরিয়ম। ভূমিকম্পের সময় সে তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমোচ্ছিল। মরিয়মের ভাইয়ের নাম ইলাফ। মরিয়মের বাবা মুস্তাফা জুহাইর আল-সাইদ জানান, তার স্ত্রী ও তিন সন্তান ঘুমোচ্ছিলেন। এরপর এই ভূমিকম্প হয়। অনুভব হয় মাটি কাঁপছে। এদিকে ঘরের ধ্বংসাবশেষ তাঁদের ওপর পড়তে থাকে। তাঁরা দুদিন ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছিলেন। তিনি বলেন, এ সময় আমি শুধু ভেবেছিলাম, কারও সঙ্গে যেন এমন না হয়।
যখন মুস্তফা জুহাইর এবং তার পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল, তখন তিনি উচ্চস্বরে কোরআন পড়ছিলেন। এবং প্রার্থনা করছিলেন যাতে কেউ তার কণ্ঠ শুনে তাকে সাহায্য করে। এর পর লোকজন তার আওয়াজ শুনে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। প্রথমে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাঁদের সন্তানরা রক্ষা পায়। তিনি উদ্ধারকারীদের ধন্যবাদ জানান।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আহত হয়েছে আরও ২০ হাজার ৪২৬ জন। ধারণা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নীচে আরও অনেকে আটকা পড়ে আছেন।
জীবিতদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে উদ্ধারকারীদের কাজ আরও কঠিন করছে তুষারপাত ও বৃষ্টি। আগামী দিনে এ পরিস্থিতি আরও বৈরী হতে পারার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭.৯ কিলোমিটার নিচে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। পরে আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭.৫। এর কেন্দ্রস্থল ছিল কাহরামানমারাস প্রদেশের এলবিস্তান নামক জেলায়।
আরও পড়ুন-উদ্ধারকাজে ঝাঁপ, বিপদের ‘দোস্ত’ ভারতকে ধন্যবাদ তুরস্কের