স্বৈরাচার নিপাত যাক। লন্ডন, ওয়াশিংটন, মাদ্রিদ, সব জায়গাতেই কান পাতলেই সেই স্লোগান। খালি ভাষাটা আলাদা। রাস্তায় নেমেছেন হাজার মানুষ। সবার মুখে একই স্লোগান, 'No Kings!'। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এই আন্দোলন।
গতকাল, শনিবার থেকেই শুরু হয়েছে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি। আন্দোলনের মূল দাবি একটাই, ট্রাম্পের একনায়কতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। আন্দোলনকারীদের কথায়, এই বিক্ষোভ গণতন্ত্র রক্ষার প্রচেষ্টা মাত্র।
শনিবার লন্ডনের মার্কিন দূতাবাসের সামনে কয়েকশো মানুষ জড়ো হন। হাতে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, 'We don’t have kings!'। এই আন্দোলন শুধু লন্ডনে নয়। স্পেনের মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, এমনকি আমেরিকার ছোট শহরগুলোতেও শুরু হয়েছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। অভিবাসন নিয়ে শুরুতেই কঠোর আইন আনেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদান বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন। সমালোচকদের দাবি, তাঁর এসব পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক স্তরে বিভাজন বাড়ছে।
'আমেরিকার আসল পরিচয় হচ্ছে সেদেশের স্বাধীনতা। আমরা কোনও রাজার শাসন মানি না,' বললেন ‘ইনডিভিজিবল’ সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা লিয়া গ্রিনবার্গ। তাঁর মতে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠ ভার্জিনিয়াতেও হয় মিছিল। শহরের ফ্লাইওভার পেরিয়ে বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে যান জাতীয় কবরস্থান পর্যন্ত। ওই এলাকাতেই ট্রাম্প একটি স্মারক তোরণ বানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
আয়োজকদের দাবি, ৩০০-রও বেশি সংগঠন যুক্ত হয়েছে এই উদ্যোগে। ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে আইনগত সহায়তা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য।
আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন বার্নি স্যান্ডার্স, আলেক্সান্দ্রিয়া অকাসিও-কর্তেজ ও হিলারি ক্লিনটনের মতো নেতারা। বহু জনপ্রিয় শিল্পীও যোগ দিয়েছেন সমর্থনের কণ্ঠে। জুন মাসেও এমনই বিক্ষোভ হয়েছিল। সেদিন ছিল ট্রাম্পের জন্মদিন।
তবে রিপাবলিকান নেতারা এই আন্দোলনকে বলছেন ‘অ্যান্টি-আমেরিকান’। কংগ্রেস নেতা মাইক জনসনের অভিযোগ, 'ডেমোক্র্যাটরা আসলে আমেরিকা-বিরোধী প্রচার চালাচ্ছে।'
বিশ্লেষকদের মতে, এই ‘নো কিংস’ আন্দোলন সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় নাগরিক বিক্ষোভ। সমাজবিজ্ঞানী ডানা ফিশারের মতে, 'এটা শুধু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নয়। এটা সেইসব মানুষের কণ্ঠস্বর, যাঁরা নিজেদের অবদমিত মনে করছেন।'