ভারতে HMPV ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। দেশে এখন পর্যন্ত সংক্রামকের সংখ্যা ১২। চিন থেকে উদ্ভূত এই ভাইরাসের কবলে একাধিক দেশ। চিনে এই ভাইরাস কী প্রভাব ফেলছে তার ঠিকঠাক খবর থাকা দরকার। চিনেও বাড়ছে এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ। কিন্তু পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে চিন সরকার। সে দেশ থেকে ভাইরাস সংক্রান্ত কোনও খবরই মিলছে না। বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চিনের হাসপাতালে এই ভাইরাসে আক্রান্তরা জ্বর নিয়ে চিকিৎসাধীন। সাধারণ জ্বর ও এইএমপিভি-র লক্ষণগুলি একই রকম। এমতাবস্থায় চিনের লুকোছাপার জেরে আরও বেশি করে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি।
একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এইচএমপিভি ভাইরাস চিনে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। রোগীরা হাসপাতালে বেড পাচ্ছেন না। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সত্যিই কি তাই? বেজিংয়ের দাবি উল্টো। তারা দাবি করেছে, এইচএমপিভি ভাইরাসের প্রকোপ কমার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ একেবারে রুখে দেওয়া গিয়েছে তা বলতে পারছে না বেজিং। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিডিসি জানিয়েছে, দেশে ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা এখনও রয়েছে।
করোনার পরিসংখ্যান গোপন
কোভিডের সময় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে তথ্য গোপন করেছিল চিন। তার ফল ভুগতে হয়েছে গোটা দুনিয়াকে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল, উহানে নিউমোনিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। কিন্তু চিন যখন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে অবহিত করেছিল, তার দেড় মাস আগেই তা সংক্রমিত হয়েছিল।
২০২০ সালের ১৩ মার্চ সরকারি নথি উদ্ধৃতি করে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট দাবি করেছিল,২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর হুবেই প্রদেশে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ২৬৬ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল। ২০২১ সালের মে মাসে গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়,২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির তিনজন গবেষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু চিন দাবি করেছিল, ৩০ ডিসেম্বরের আগে কোভিডের কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।
বিজ্ঞান গবেষণাপত্র ল্যানসেট দাবি করে, করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিকে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর পাওয়া গিয়েছিল। ঘটনা হল, এই গবেষণাটি করেছেন চিনের গবেষকরাই। ল্যানসেটের গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর উহানের জিনইন্টান হাসপাতালে করোনাভাইরাসের প্রথম আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল।
শুধু তাই নয়, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম যে চিনা ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং বলেছিলেন, তাঁকে সরকার কেবল উপেক্ষাই করেনি, তাঁর বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগও আনা হয়েছিল। লিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। চিনের এই অবহেলার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেনেরসাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় অনুমান করেছিলেন, চিন যদি তিন সপ্তাহ আগে করোনা সম্পর্কে অবহিত করত, তাহলে সংক্রমণের বিস্তার ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো যেত। শুধু তাই নয়, যদি তাঁরা অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে জানাত, তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬ শতাংশ কমানো যেত।