মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে দাঁড়িয়ে, ভারত নিজের ঐতিহ্যগত ভারসাম্যের কূটনীতি বজায় রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার পর ভারত যে তৎক্ষণাৎ তেহরানকে ফোন করে, আবার ইজরায়েলের সঙ্গেও কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বজায় রাখে। তা থেকেই ভারতের কৌশলগত অবস্থান স্পষ্ট: কারও পাশে গিয়ে নয়, সকলের সঙ্গে থাকায় বিশ্বাস করে।
ইরান: শতাব্দীপ্রাচীন সম্পর্কের বন্ধু
ভারত ও ইরানের সম্পর্ক শুধু আধুনিক রাষ্ট্রীয় স্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বহু শতাব্দী ধরে সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং বাণিজ্যিক স্তরে গড়ে ওঠা সম্পর্কই এই দুই দেশের মেরুদণ্ড। চাবাহার বন্দর ভারতের জন্য শুধু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি পাকিস্তান ও চিনের যৌথ উদ্যোগের (গোয়াদর বন্দর এবং বিআরআই) বিরুদ্ধেও ভারতের একটি সক্রিয় জবাব। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত চাবাহারে লগ্নি বজায় রেখে ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে।
ইজরায়েল: প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তির আধুনিক মিত্র
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা এবং কৃষি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। এর ফলে ভারত-ইজরায়েল সম্পর্ক হয়ে উঠেছে কৌশলগত সহযোগিতার মডেল।
ভারতের কৌশলগত ভারসাম্য
ভারত কখনও একপাক্ষিক অবস্থান নেয়নি। কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারত বরাবরই ‘সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধান’-এর পক্ষপাতী। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকা—হোক তা ইরানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে, বা ইরানের সমর্থনে—তারই ইঙ্গিত বহন করে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি তাই স্পষ্ট: কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে, নিজস্ব স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। ইরান ও ইজরায়েল—উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ভারত মধ্যপ্রাচ্যে একটি দায়িত্বশীল, নিরপেক্ষ ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছে।