জীবনটা কতটা অনিশ্চিত, তা আরেকবার প্রমাণ করল নিউ ইয়র্কে ঘটে যাওয়া একটি হৃদয়বিদারক বিমান দুর্ঘটনা। একটি ছোট বিমান ভেঙে পড়ার ফলে মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন নামী চিকিৎসক ডা. জয় সানি সহ তাঁর পরিবারের ছয় জন সদস্যের। বিমানটি চালাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী মাইকেল গ্রফ।
জয় সানি মূলত পাঞ্জাবের মেয়ে। বাবা-মা কুলজিত এবং গুরদেব সিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। পিটসবার্গ ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিন থেকে পাশ করে ইউরোগাইনেকোলজি এবং পেলভিক সার্জারিতে বিশেষজ্ঞ হন। একজন শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু গত শনিবার তাঁর জীবন থেমে গেল মাঝ আকাশে।
ছোট একটি বিমান জয় ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিউ ইয়র্কের ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টি বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে গিয়েছিল ক্যাটস্কিলসের উদ্দেশে, যেখানে তাঁরা একটি যৌথ জন্মদিন এবং পাসওভার সেলিব্রেশন করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর মাত্র ১০ মাইল আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমানটি।
বিমান চালাচ্ছিলেন স্বামী, শেষ মুহূর্তে চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না
দুর্ঘটনার আগে মাইকেল গ্রফ কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান বিমান ভুল পথে চলে যাচ্ছে এবং তিনি আবার ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করতে চান। কিন্তু বিধিবাম, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চূড়ান্ত মুহূর্ত পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চললেও এক ঝটকায় নেমে আসে ট্র্যাজেডি।
কারা ছিলেন সেই বিমানে?
জয়ের দুই সন্তান কেরেনা এবং জ্যারেড, জ্যারেডের পার্টনার আলেক্সিয়া, কেরেনার বয়ফ্রেন্ড জেমস স্যান্টোও দুর্ঘটনার শিকার হন। তাঁদের আরেক সন্তান অনিকা সৌভাগ্যবশত বিমানে ছিলেন না।
কেরেনা একজন অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান মেয়ে ছিলেন। MIT থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, ২০২২ সালে এনসিএএ 'উইম্যান অফ দ্য ইয়ার' হন এবং কোভিডকালে PPE তৈরি ও বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। NYU-তে মেডিকেল স্কুল শুরু করেছিলেন সদ্য।
এই দুর্ঘটনা কি এড়ানো যেত?
NTSB (ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড) এবং FAA এই দুর্ঘটনার তদন্ত করছে। জানা গেছে, বিমানটিতে সম্প্রতি ককপিট আপগ্রেড করা হয়েছিল, কিন্তু এটি দুর্ঘটনার কোনো কারণ কি না, তা স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমাগত দুর্ঘটনা, উদ্বেগে বিমানযাত্রীরা:
এই দুর্ঘটনার আগেও ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে একাধিক বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে আমেরিকায়। কখনো ইঞ্জিনে আগুন, কখনো প্লেন-মিড এয়ার কলিশন—সব মিলিয়ে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ডা. জয় সানির মতো একজন প্রতিভাবান এবং মানবিক মানুষকে আমরা হারালাম। তাঁর জীবনের গল্প যেমন অনুপ্রেরণার, তেমনি তাঁর চলে যাওয়াটা এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্য রইল গভীর শ্রদ্ধা এবং প্রার্থনা।