
২ ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় টেকটনিক প্লেট। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় জানতে পেরেছেন, এই প্লেটের নিম্ন এবং ঘন অংশটি পৃথক হয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরে ডুবে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ডিলামিনেশন। এই আবিষ্কার হিমালয় অঞ্চলে ভূমিকম্পের ধরনে পরিবর্তন করতে পারে। যা পৃথিবীতে বিজ্ঞানের দীর্ঘস্থায়ী অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করছে।
এই পরিবর্তন কীভাবে ঘটছে?
ভারতীয় প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল ৬০ মিলিয়ন বছর আগে। যা হিমালয় পর্বতমালা তৈরি করেছিল। পূর্বে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, ভারতীয় প্লেটটি সম্পূর্ণরূপে ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে পিছলে যাচ্ছে। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্লেটটি সম্পূর্ণরূপে অভিন্ন নয়। তিব্বতের নীচে ভারতীয় প্লেটের নীচের অংশ উপরের অংশ থেকে আলাদা হয়ে ডুবে যাচ্ছে। হাল্কা উপরের অংশটি এগিয়ে চলেছে।
এটি জানার জন্য বিজ্ঞানীরা তিব্বতের উষ্ণ প্রস্রবণে ভূকম্পীয় তরঙ্গ বিশ্লেষণ করেছেন এবং হিলিয়াম আইসোটোপ পরীক্ষা করেছেন। হিলিয়াম-৩ গ্যাস ম্যান্টল থেকে আসে। যা ইঙ্গিত দেয়, প্লেটটি ফাটছে এবং ম্যান্টল থেকে উত্তপ্ত শিলা উঠছে। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ সাইমন ক্লেম্পেরার এবং তার দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন, যা আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন সভায় উপস্থাপিত হয়েছিল। উট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী ডুয়ে ভ্যান হিন্সবার্গ বলেন, 'আমরা জানতাম না মহাদেশগুলি এভাবে আচরণ করতে পারে। এটি পৃথিবীর মৌলিক বিজ্ঞানের ধারণাগুলিকে পরিবর্তন করে। এই প্রক্রিয়াটি মূলত পূর্ব হিমালয় এবং তিব্বতের নীচে ঘটছে। কোনা-সাংগ্রি রিফ্টের মতো গভীর ফল্টগুলি এই বিভাজনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।'
ভূমিকম্পের ঝুঁকি কতটা?
হিমালয় অঞ্চল ইতিমধ্যেই ভূমিকম্প প্রবণ। এখন এই বিচ্ছিন্নতা নতুন চাপ তৈরি করতে পারে। যার ফলে ভূমিকম্প আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হয়ে উঠতে পারে। সাইমন ক্লেম্পেরার সতর্ক করছেন, প্লেট ফেটে যাওয়া এবং অবনমন পৃথিবীর ভূত্বকে নতুন চাপ তৈরি করতে পারে। যার ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। তিব্বতীয় মালভূমির কোনা-সাংগ্রি রিফ্টের মতো জায়গায় এই ঝুঁকি বেশি।
টেকটনিক প্লেট
টেকটনিক প্লেট হল পৃথিবীর বাইরের স্তরের (ক্রাস্ট) টুকরো যা ম্যাগমার উপর ভাসমান। ভারতীয় প্লেট প্রতি বছর প্রায় ৫ সেন্টিমিটার উত্তর দিকে সরে যায়। তিব্বতের অধীনে এটি অবনমিত হওয়ার পরিবর্তে ফাটল ধরাচ্ছে।
এটি কীভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল?
প্লেটের মধ্য দিয়ে ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পের তরঙ্গ পরিবর্তিত হয়। বিজ্ঞানীরা GPS ডেটা স্যাটেলাইট চিত্র থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তিব্বত উত্থিত হচ্ছে।
প্লেটের চাপ বেড়েছে। উপরের অংশ হিমালয় পর্বতমালাকে উপরে তুলেছে (প্রতি বছর ৫ মিমি)। কিন্তু নীচের অংশটি পিছলে যেতে পারছে না।
এই ফাটল নতুন প্লেট তৈরি করবে যা হিমালয় পর্বতমালাকে উঁচু বা সমতল করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি ধীর তবে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে।
কী প্রাভাব পড়বে?
হিমালয় অঞ্চলে বিশ্বের ৮০% ভূমিকম্প হয়। ভারত, নেপাল এবং চিনে লক্ষ লক্ষ বাড়িঘর ধসে পড়ে।
ম্যাগমা উত্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন আগ্নেয়গিরি তৈরি হবে। হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র নদীতে বন্যা দেখা দেবে।
হিমালয় অঞ্চলে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করে। ভূমিকম্পটি দিল্লি-NCR-এ বড় প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থনীতির ১ ট্রিলিয়ন টাকা ক্ষতি হতে পারে।
হিমালয়ের জীববৈচিত্র ঝুঁকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন আরও দ্রুতগতিতে হবে।
বিজ্ঞানের উপর কী প্রভাব?
এই আবিষ্কার টেকটনিক প্লেটের দীর্ঘস্থায়ী তত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। আগে বিশ্বাস করা হত, মহাদেশীয় প্লেটগুলি ডুবে যায় না। কিন্তু এখন জানা গিয়েছে, সেগুলি জটিল উপায়ে আচরণ করতে পারে। এটি হিমালয় এবং তিব্বতী প্লেটগুলি কীভাবে উত্থিত হয়েছিল ত বুঝতে সাহায্য করবে।
এই গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবী ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় প্রস্তুতি এবং শক্তিশালী ভবন নির্মাণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।