প্রকাশ্যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানাল পাকিস্তান। এমন ঘোষণায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। কারণ, এই ঘোষণার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক স্পর্শকাতর কূটনৈতিক দিক। একদিকে যখন আমেরিকা ও ইজরায়েল ইরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে চায়, তখন পাকিস্তান ঠিক তার বিপরীত পথে হাঁটল।
ইরানি রাষ্ট্রপতির পাকিস্তান সফর: ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বার্তা
সম্প্রতি ইরানের নতুন রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান পাকিস্তান সফরে গিয়েছেন। ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। এই সফরে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার করে ১২টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ১০ বিলিয়ন ডলার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পরমাণু ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান: আমেরিকার বিপক্ষে স্পষ্ট বার্তা?
এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের মুখে। তিনি বলেছেন, 'শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের অধিকার ইরানের রয়েছে। পাকিস্তান সবসময় ইরানের পাশে থাকবে।' এই বক্তব্য শুধু ইজরায়েল ও আমেরিকার বিরোধিতার বিপরীতে নয়, বরং এই দুই দেশের কৌশলগত অবস্থানের প্রতি এক ধরণের চ্যালেঞ্জ।
২০১৫ সালের JCPOA (Joint Comprehensive Plan of Action) চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের উপর চাপ ক্রমশ বাড়িয়েছে ওয়াশিংটন ও তেলআবিব। সম্প্রতি ২০২৫ সালের জুনে ইরানের নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহানে আমেরিকা এবং ইসরায়েলের যৌথ বোমাবর্ষণের প্রেক্ষিতে এই ঘোষণার তাৎপর্য অনেক বেশি।
ট্রাম্পের প্রভাব ও দ্বিমুখী কূটনীতি?
উল্লেখযোগ্য যে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে শুল্কছাড় সহ একাধিক অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন। তেল সংক্রান্ত সহযোগিতার বার্তাও দিয়েছেন ট্রাম্প। সেই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের এই অবস্থান কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন সেনাপ্রধান আসিম মুনির? যিনি কিছুদিন আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।
কূটনৈতিক মহলের অনুমান, মুনির হয়তো এই অবস্থানকে ‘শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তির সমর্থন’ বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন। পাকিস্তান নিজেই একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ, ফলে শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তির অধিকার নিয়ে তাদের অবস্থান অনেকদিন ধরেই স্পষ্ট। এদিকে কিছুদিন আগে হোয়াইট হাউসে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পর দু’জনে একটি বৈঠকও করেন। বৈঠকের পর ট্রাম্প জানান, মুনিরের সঙ্গে দেখা করতে পেরে তিনি সম্মানিত। ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি নিয়েও নতুন দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এবার মুনির ট্রাম্পকে কী জবাব দেবেন?