
ইরান নতুন এক প্রাকৃতিক সংকটের ইঙ্গিত পাচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে অবস্থিত তাফতান আগ্নেয়গিরি, যা প্রায় ৭ লক্ষ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় বলে মনে করা হত, ফের জেগে ওঠার লক্ষণ দেখাচ্ছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ESA) সেন্টিনেল-১ উপগ্রহের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আগ্নেয়গিরির চূড়া ধীরে ধীরে ফুলে উঠছে, যা ভেতরে চাপ বাড়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে তাফতানের চূড়ার কাছের ভূমি প্রায় ৯ সেন্টিমিটার উপরে উঠেছে। ইন্টারফেরোমেট্রিক সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (InSAR) প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সূক্ষ্ম পরিবর্তন ধরা পড়েছে। নতুন বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে বায়ুমণ্ডলীয় প্রভাব বাদ দেওয়ায় তথ্য আরও নির্ভুল হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাপের উৎস চূড়ার মাত্র ৪৯০ থেকে ৬৩০ মিটার নীচে, অর্থাৎ অত্যন্ত অগভীর স্তরে।
এই উত্থানের প্রধান কারণ হিসেবে আগ্নেয়গিরির ভেতরে গ্যাস বা অতিগরম জল জমে থাকা, কিংবা গভীরে সামান্য ম্যাগমা নড়াচড়ার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও ২০২৩ সাল থেকে তীব্র সালফারের গন্ধ ও গ্যাস নির্গমনের কথা জানিয়েছেন। গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ২০ টন সালফার ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে।
তাফতান আগ্নেয়গিরি পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, উচ্চতা প্রায় ৩,৯৪০ মিটার। এটি মাকরান সাবডাকশন জোনে অবস্থান করছে, যেখানে আরব প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে ঢুকে যাচ্ছে। যদিও আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, তবুও তাঁরা সতর্ক করছেন, চাপ বাড়লে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন বা ছোটখাটো বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই উপগ্রহের পাশাপাশি স্থলভিত্তিক নজরদারি ও জরুরি পরিকল্পনা তৈরির উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।