'মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে ইরানের হামলা নজিরবিহীন ঘটনা,' এমনই দাবি করলেন ভারতে ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. ইরাজ এলাহি। ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, কাতার ও ইরাকে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে মিসাইল ছুঁড়ে কড়া বার্তা দিয়েছে তেহরান। ভবিষ্যতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসন দেখালে, ইরান পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ইরানের রাষ্ট্রদূতের স্পষ্ট বক্তব্য, 'এর আগে কোনও দেশ আমেরিকার সেনা ঘাঁটিতে হামলার হিম্মত দেখায়নি। ইরান সেটাই করেছে। এটি একটি প্রতীকী প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভাবা যেতে পারে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার এই ধরনের অনৈতিক কাজকর্ম করে, তাহলে ফের সেই একই জবাব ফেরত পাবে।'
সোমবার ইরান কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালায়। তার আগে শনিবার ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা। যদিও বেশিরভাগ মিসাইল মাঝপথেই ডিফেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে রুখে দেওয়া হয়।
তবে হামলার পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনার বড় সাফল্য।
'নেতানিয়াহু বিশ্বাসযোগ্য নন'
ইরানের রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মানবিক আইন ও আন্তর্জাতিক নিয়ম উপেক্ষা করে ইরানে হামলা চালিয়েছেন। সাধারণ মানুষ, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল -কিছুই রেয়াত করা হয়নি। তিনি বলেন, 'ইজরায়েলে যদি আবারও কোনও আক্রমণ চালানো হয়, ইরান তার জবাব দিতে প্রস্তুত।'
নেতানিয়াহু যদিও এর আগে দাবি করেছিলেন যে, ইরান নাকি পরমাণু অস্ত্র তৈরির অন্তিম পর্যায়ে রয়েছে। তাই ইজরায়েলের এই আক্রমণ আসলে আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা মাত্র। কিন্তু ড. এলাহি সেই প্রেক্ষিতে বলেন, 'ইরান পরমাণু অস্ত্র হ্রাসের চুক্তি (NPT)-তে সই করেছে। আমাদের কোনও নিউক্লিয়ার ওয়েপন নেই। ইজরায়েল মিথ্যা অজুহাতে আক্রমণ করেছে।'
‘আয়রন ডোম’ ভেদ করে ইজরায়েলে ঢোকে ইরানের মিসাইল
ইরানের রাষ্ট্রদূতের দাবি, যুদ্ধের সময় ইজরায়েল তার বিখ্যাত 'আয়রন ডোম' সহ একাধিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম চালু করে দিয়েছিল। তবু ইরানের মিসাইল ইজরায়েলের ভিতরে গিয়ে আঘাত হেনেছে। তিনি বলেন, 'আমরা যুদ্ধ বাড়াতে চাই না। কিন্তু কোনও বহিরাগত শক্তি যেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের দেশগুলির সমর্থন ছাড়া ইজরায়েল কিছুই করতে পারবে না', এমনটাই দাবি করেন ইরানের রাষ্ট্রদূত। বলেন, 'আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরেই ইরান সরকারের পতনের স্বপ্ন দেখছে। সেটা স্বপ্নই থেকে যাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ট্রাম্পকে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি বলেছিলেন গাজায় শান্তি আনবেন। কিন্তু গাজায় গণহত্যা থামেনি।'
উল্লেখ্য, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল ইরান। এই প্রণালীর মাধ্যমেই বিশ্বের মোট খনিজ তেলের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ করা হয়। সেই বিষয়ে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমরা কোনও দেশকেই সমস্যায় ফেলতে চাই না। সেই কারণেই সংঘর্ষটা ইজরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছি।'
সব মিলিয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও একপ্রকার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখল ইরান। আগামিদিনে দুই দেশের মধ্যে পরিস্থিতি কোন দিকে এগোয়, এখন সেটাই দেখার।