তেহরানের আকাশে গর্জে উঠেছে ইজরায়েলের যুদ্ধবিমান। ইরানের পালটা মিসাইল। পরমাণু অস্ত্রের হুমকি। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েই গেল তাহলে? ইরান ও ইজরায়েলের যুদ্ধ এখন আর সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই। এই যুদ্ধ এখন বিশ্ব যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে গোটা মানবসভ্যতাকে। পশ্চিম এশিয়ার এই দুই চিরবৈরী দেশের সংঘাত এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখান থেকে হয়তো আর ফিরে আসার রাস্তা থাকবে না। কারণ এখন শুধু ট্যাঙ্ক, মিসাইল, ড্রোনের লড়াই নয়—পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি খোলা মুখে দিচ্ছে ইরান, আর ইজরায়েল বলছে—তারা কিছুতেই চুপ করে বসে থাকবে না।
সোমবার সকাল। যখন সবাই ব্যস্ত নতুন সপ্তাহের কাজে, তখনই খবর এল—ইরানি মিসাইল হামলা চলছে ইজরায়েলের বড় শহরগুলিতে। শিশু, মহিলা—নিহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পাল্টা প্রতিশোধ নিতে দেরি করেনি তেল আভিভ। ইজরায়েলের যুদ্ধবিমান হানা দেয় তেহরানের সামরিক ঘাঁটিতে। ফার্স নিউজ জানায়, ইরানের আকাশে সাইরেন বেজে ওঠে, সক্রিয় হয় তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আর এখানেই শেষ নয়। ইজরায়েল সরাসরি হামলা চালায় ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম IRIB-র সদর দপ্তরে। যুদ্ধ এবার তথ্যের ওপরও নেমে এসেছে।
ইরানে ভারতীয়দের জন্য হেল্পলাইন চালু, যোগাযোগ করছে দূতাবাস
যুদ্ধ যত ভয়াবহ হচ্ছে, ততই আশঙ্কায় রয়েছেন তেহরানে থাকা ভারতীয় নাগরিকরা। ভারতীয় দূতাবাস স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে— 'যাঁরা এখনও দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, তাঁরা অবিলম্বে নিজেদের অবস্থান ও ফোন নম্বর জানিয়ে যোগাযোগ করুন।' জরুরি নম্বর: +989010144557, +989128109115, +989128109109। এই মুহূর্তে তেহরানে অবস্থান করা মানে যুদ্ধবন্দী শহরে বাস করা। মিসাইল, গ্যাস হামলার আশঙ্কা, পানি-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা—সব মিলিয়ে এক ভয়ঙ্কর অচেনা বাস্তব।
এই যুদ্ধ কি পরমাণু বিস্ফোরণের দিকে এগোচ্ছে? IAEA-এর রিপোর্ট উদ্বেগজনক
ইজরায়েল অভিযোগ করছে, ইরান নাকি পরমাণু বোমা তৈরির একেবারে শেষ ধাপে পৌঁছে গেছে। সেই কারণেই তারা 'অপারেশন রাইজিং লায়ন'-এর অধীনে টার্গেট করছে ইরানের পরমাণু ও মিসাইল কেন্দ্র। ইরান আবার বলছে, তারা NPT (নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি) থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। যদিও তারা দাবি করছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু জাতিসঙ্ঘের পরমাণু সংস্থা IAEA গত সপ্তাহেই জানিয়েছে, ইরান তাদের পারমাণবিক শর্তাবলি লঙ্ঘন করেছে। অর্থাৎ এবার পরমাণু যুদ্ধ যে কেউ শুরু করতে পারে।
G7 বলছে, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র না পায়, কিন্তু ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে
কানাডার কানানাস্কিসে বসেছে G7 সম্মেলন। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা মিলিত বার্তায় বলেছেন—
ইরান ও ইজরায়েলের সংঘর্ষ বন্ধ হোক
ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে
ইরান যেন কোনওভাবেই পরমাণু অস্ত্র না পায়
এনার্জি মার্কেট ও বিশ্ব অর্থনীতি যেন এই যুদ্ধে ধ্বংস না হয়
জি৭ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও উপস্থিত। তাঁর জন্যও এই যুদ্ধবিরোধী চাপ বাড়ছে।
তেহরান যুদ্ধবিধ্বস্ত হলে কী হবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, তেহরান যদি পুরোপুরি যুদ্ধবিধ্বস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে ভারতীয়দের জীবন সঙ্কটে পড়বে। তেহরানের ওপর ইজরায়েল পাল্টা হাই-ইন্টেনসিটি বম্বিং চালাতে পারে। গ্যাস বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে, ইরান যদি সত্যিই পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার পথে যায়, তাহলে এই যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়—দক্ষিণ এশিয়াকে সরাসরি টেনে আনবে।
এই মুহূর্তে ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধ বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। আমেরিকা ও ইজরায়েলের মধ্যে রণনীতিগত সমঝোতা যেমন স্পষ্ট, তেমনই রাশিয়া ও চিন হয়তো এবার তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে পশ্চিমকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এই যুদ্ধের গতি ও পরিণতি এখন শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবসভ্যতার অস্তিত্ব নির্ভর করছে পরবর্তী কয়েক দিনের উপর।