মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত। ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে চরমে উঠেছে উত্তেজনা। ১৩ জুন, শুক্রবার ইজরায়েল ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে নিশানা করে একের পর এক মিসাইল হামলা চালায়। সেনা ঘাঁটিতে ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়। এই হামলায় ইরানের একাধিক বৈজ্ঞানিক এবং সেনা কর্তা নিহত হয়েছেন। পাল্টা শনিবার ইরানও ইজরায়েলে শতাধিক মিসাইল ছোড়ে। নতুন করে এই সংঘর্ষে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সিঁদুরে মেঘ দেখছে আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ।
আমেরিকার সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত মিলছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই ইজরায়েল শুরু করেছে 'অপারেশন রাইসিং লায়ন'। পাল্টা ইরানের 'অপারেশন ট্রু প্রমিস'। এখন পশ্চিম এশিয়ায় যা ঘটছে বা ঘটে চলেছে তার সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিল পাচ্ছেন অনেকেই। একইরকম প্লট। শুক্রবারের ইজরায়েল-ইরান সংঘাতে প্রশ্ন উঠছে, আরও এক ওয়ারফ্রন্ট কি খুলে গেল? দু-দেশই রণংদেহী। একে-অপরকে সবক শেখাতে চায়। এমন একটা সময়ে আশঙ্কা বাড়ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ইজরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছেন। রাশিয়া এবং চিনের বয়ান এসেছে ইরানের পক্ষে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দুই দেশকেই সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানিয়েছে ভারত।
কোন কোন দেশের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ানোর আশঙ্কা?
ইরান এবং ইজরায়েলের যুদ্ধ লাগলে আমেরিকা ন্যাটো দেশগুলিকেও এই যুদ্ধে টানার চেষ্টা করবে। ইরানকে সেনা দিয়ে সমর্থন করতে পারে রাশিয়া এবং চিন।
বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধ না লাগলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে।
স্ট্র্যাটেজি
মধ্য প্রাচ্যে আমেরিকার প্রভাব কমিয়ে আনতে চায় রাশিয়া। ইরানকে সমর্থন করলে রাশিয়ার সামনে সেই সুযোগ চলে আসবে। ইরানকে সেনা দিয়ে সমর্থন করতে পারে চিন। সেক্ষেত্রে যুদ্ধ আরও বেশি দিন পর্যন্ত গড়াবে। চিন মধ্য প্রাচ্যে নিজের তেল এবং গ্যাস আমদানি অংশগুলিকে অক্ষত ও মজবুত রাখার চেষ্টা করবে। ইজরায়েল এবং আমেরিকা একজোট হলে চিনও ইরানকে প্রত্যক্ষ ভাবে সমর্থন জানাতে পারে।
অন্যান্য দেশের ভূমিকা
জর্ডন ইরানকে ড্রোন হামলার মোকাবিলা করতে সহায়তা করেছে। তবে সৌদি আরব এভং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এই বিষয় থেকে দূরে রয়েছে। তুরস্ক মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ইজরায়েলের সঙ্গে তাদর সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। ভারত দুই দেশকেই শান্তির বার্তা দিয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য দুই দেশের সতর্কবার্তা এবং হেল্পলাইন জারি করেছে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তেলের দাম পৌঁছবে ১০০ ডলার প্রতি ব্যারেল। পাশাপাশি ইরান পরমাণু হাতিয়ার ব্যবহার করলে ত্রাহি ত্রাহি রব পড়ে যাবে।