নানা কারণে সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হন পুরুষরা। একটা সময়ে ভাবা হত, পুরুষ বন্ধ্যাত্ব কখনও নিরাময় সম্ভবনয়। তবে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পুরুষ বন্ধ্যাত্ব রোধে এমন সমাধান বাতলে দিয়েছে, তা আগে কল্পনাতেও ছিল না। এবার ল্যাবেই তৈরি হচ্ছে স্পার্ম। আর সেই গবেষণাতেই খুলে গিয়েছে নতুন দিশা।
গত ৭০ বছরে পুরুষদের শুক্রাণুর গুণমান এবং সংখ্যা কমেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। কেবলমাত্র পরিবার গঠনের পথে বাধা নয়, এই সমস্যা জনস্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলেছে। শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে টেস্টিকুলার ক্যান্সার, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং জন্মগত যৌনাঙ্গের ত্রুটিও বেড়েছে।
তবে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসকরা সার্জিকাল স্পার্ম রিট্রাইভাল নামে এক অস্ত্রপচার পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তবে এই পদ্ধতি যন্ত্রণাদায়ক এবং অনেক সময়েই এতে সাফল্যের হার সীমিত। একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে পদ্ধতি। ফলে বিকল্প হয়ে উঠেছিল শুক্রাণু দান। যা অধিকাংশ পুরুষের কাছেই মানসিক ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়।
তবে বিজ্ঞানীরা এখন এমন একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছেন যা এই জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে। এবার ল্যাবেই তৈরি হবে মানব শুক্রাণু।
কীভাবে কাজ করবে এই গবেষণা?
লিমেরিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইঁদুরের স্টেম সেলের ব্যবহার করেছেন গবেষণার জন্য। ল্যাবে সেই সেলগুলিকে স্পার্মে বদলে দেন গবেষকরা। এই উৎপন্ন স্পার্মের সাহায্যে ইঁদুরের ডিম্বানু নিষেক বা ফার্টিলাইজ করা হয়। এতে দেখা গিয়েছে, ইঁদুরের সুস্থ বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে। ঠিক একই ভাবে পুরুষদেহের সেল থেকেই ভবিষ্যতে ল্যাবে স্পার্ম তৈরি করা সম্ভব হবে।
কেন এত জরুরি এই প্রযুক্তি?
অনেক পুরুষই আছেন যাদের শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে কেমোথেরাপি অথবা রেডিয়েশনের ফলে। আবার কেউ জন্ম থেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। তাদের জন্য এখনও কার্যকর কোনও চিকিৎসা নেই। ল্যাবে জন্মানো শুক্রাণু এইসব রোগীদের নতুন জীবনদান করবে।
এই প্রযুক্তি সফল হলে কী হবে?
প্রথমত, বাবা হতে অক্ষমরা লাভবান হবেন।
দ্বিতীয়ত, নারীর শরীরের উপর IVF-এর চাপ কমবে।
তৃতীয়ত, অজানা কারণে বন্ধ্যাত্বে ভোগা রোগীদের জন্য নতুন চিকিৎসার রাস্তা খুলবে।
তবে এই গবেষণার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত করার পথে বহু প্রতিকূলতা রয়েছে। রয়েছে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও। মানব শুক্রাণু উৎপাদন পরীক্ষাগারে প্রমাণ হয়নি। তবে অগ্রগতি দ্রুত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।