প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত এক মনোরম দ্বীপরাষ্ট্র- ভানুয়াতু। এতদিন ভারতের বেশিরভাগ মানুষই এই দেশের অস্তিত্বটুকুও জানতেন না। কিন্তু হঠাৎ খবরের শিরোনামে এই ৮০ দ্বীপের দ্বীপপুঞ্জ। সৌজন্যে, প্রাক্তন আইপিএল কর্তা ললিত মোদী। এই ভানুয়াতুরই নাগরিকত্ব পেয়েছেন তিনি।
ললিত মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় তাঁকে খুঁজছে ভারত সরকার। সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে ললিত মোদী তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট সমর্পণের আবেদন করেছেন।
২০১০ সালে ভারত ছেড়ে লন্ডনে পালিয়ে যান ললিত মোদী। সেই থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন। ভানুয়াতু নিয়ে হঠাৎ এত আলোচনা মূলত দেশটির 'সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট' (CBI) প্রোগ্রামের জন্য। এটি 'গোল্ডেন পাসপোর্ট' নামেও পরিচিত।
ভানুয়াতু কোথায় এবং কেন জনপ্রিয়
ভানুয়াতু অস্ট্রেলিয়া ও ফিজির মাঝে অবস্থিত। ট্রপিক্যাল আবহাওয়া এবং মনোরম দ্বীপজীবন যদি কারও স্বপ্ন হয়, তবে এর থেকে ভাল ডেস্টিনেশন কিছু হতে পারে না। এর রাজধানী পোর্ট ভিলা একসময় ছোট শহর হলেও এখন ব্যবসা, পর্যটন এবং প্রবাসীদের প্রাণভূমি বলা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে কোনও করের বালাই নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দিব্যি রিল্যাক্স করো!
ভানুয়াতুর পাসপোর্টের অন্যতম বিশেষত্ব হল এটি দিয়ে ১২০টিরও বেশি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়।
কেন ভানুয়াতুর 'গোল্ডেন পাসপোর্ট' এত জনপ্রিয়
১. দ্রুত এবং সহজ প্রসেসিং: অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব প্রোগ্রামে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর সময় নেয়। এদিকে ভানুয়াতু মাত্র ৬০ দিনের মধ্যেই অনুমোদন দেয়।
২. ভিসা ছাড়া বহু দেশে ভ্রমণ: ভানুয়াতুর পাসপোর্ট নিয়ে ব্রিটেন, রাশিয়া এবং শেঙ্গেন অঞ্চল সহ ১০০টিরও বেশি দেশে ভিসামুক্ত বা অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা পাওয়া যায়।
৩. সেখানে বাস করার বাধ্যবাধকতা নেই: বেশিরভাগ দেশেই নাগরিকত্ব পেতে সেই দেশে নির্দিষ্ট সময় ধরে থাকতে হয়। কিন্তু ভানুয়াতুর ক্ষেত্রে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
৪. করমুক্ত: ভানুয়াতুতে আয়কর, সম্পত্তি কর বা উত্তরাধিকার করের কোনও ঝামেলা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি স্বর্গতুল্য।
৫. শান্তি!: ভানুয়াতুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। বেশ শান্তিপূর্ণ স্থানও বটে।
ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব কীভাবে পাবেন
১. এলিজিবিলিটি: ১৮ বছরের বেশি বয়স হতে হবে। অপরাধের কোনও রেকর্ড থাকা চলবে না। সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ থাকতে হবে। ন্যূনতম ২,৫০,০০০ মার্কিন ডলারের সম্পত্তি থাকতে হবে।
২. অনুমোদিত এজেন্ট লাগে: ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করা যায় না। সরকার অনুমোদিত এজেন্টের মাধ্যমেই আবেদন করতে হবে।
৩. বিনিয়োগ: ভানুয়াতুর ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রামে নির্দিষ্ট পরিমাণে অনুদান দিতে হয়। একা হলে $১,৩০,০০০, দম্পতি: $১,৫০,০০০, চার সদস্যের পরিবার: $১,৮০,০০০, অতিরিক্ত সদস্য প্রতি $১৫,০০০।
৪. প্রয়োজনীয় নথি: পাসপোর্টের কপি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, জন্ম সনদ, মেডিকেল সার্টিফিকেট, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট সহ অন্যান্য নথি।
৫. ব্যাকগ্রাউন্ড চেক: ভানুয়াতু সরকার আবেদনকারীর ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করবে।
৬. অনুমোদন ও পেমেন্ট: অনুমোদন পেলে 'প্রি-অ্যাপ্রুভাল' লেটার পাঠানো হবে। এরপর সম্পূর্ণ বিনিয়োগের টাকা দিতে হবে।
৭. শপথগ্রহণ ও পাসপোর্ট: পেমেন্ট কমপ্লিট হলে তারপর সেদেশের আনুগত্যের শপথ নিতে হবে। ভার্চুয়ালিও হতে পারে, অথবা ভানুয়াতুতে গিয়েও নেওয়া যায়। এরপর নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
ভানুয়াতু সাংবিধানিক গণতন্ত্র। দেশের রাষ্ট্রপতি নিকেনিকে ভুরোবরাভু ২০২৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে রয়েছেন। এই দেশে উষ্ণ জলবায়ু, উচ্চ আর্দ্রতা এবং নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বর্ষাকাল থাকে।
ভানুয়াতুর কাছেই টান্না দ্বীপে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ইয়াসুর রয়েছে। এছাড়াও এস্পিরিটু সান্টো দ্বীপের মতো স্থানগুলিও অত্যন্ত মনোরম।